করুণাময় সিংহ, মালদা: সারাবছর এর দেখা মেলে না। হাজার খুঁজলেও পাওয়া যায় না এই বিশেষ মিষ্টি (Bengal Sweet)। কিন্তু বছরের একটা মাত্রদিন এই মিষ্টির চাহিদাই হয় আকাশছোঁয়া। মালদা (Malda) জেলায় মেলে এই বিশেষ মিষ্টি। গোটাটাই চিনি দিয়ে তৈরি। যাঁরা চেনেন না, হঠাৎ দেখলে তাঁদের তালমিছরি মনে হলেও হতে পারে। এর নাম লেউড়ি।
এর বিশেষত্ব ঠিক কী?
শুধুমাত্র চিনি (Sugar) দিয়েই তৈরি এই লেউড়ি কিনতে বছরের একটা দিন উপচে পড়ে ভিড়। দিনটা মুলাষষ্ঠী (Mula Shasthi)। পুরাতন মালদার (Old Malda) মোকাতিপুরে বেহুলা নদীর তীরে মুলাষষ্ঠীর মেলা বলে। সেইদিন ওই এলাকায় ঢল নামে মুলাষষ্ঠীর পুজো দেওয়ার জন্য। ওই পুজোর মূল ভোগ এই লেউড়ি। নিয়ম হল, ওখানে গিয়ে প্রথমে লেউড়ি কিনতে হবে, তারপর পুজো দিতে যাবেন ভক্তরা। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রথা চলে আসছে। তবে শুধুমাত্র পুজো নয়, মেলায় ঘুরতে আসা সাধারণ দর্শকদেরও পছন্দের তালিকায় রয়েছে লেউড়ি। বিশেষত্বের কারণে চাহিদাও তুঙ্গে থাকে। তাই ওই মেলায় গেলে চিনির তৈরি লেউড়ি কিনেই ফেরেন দর্শকরা। ফলে ব্যাপক বিক্রি হয় এই মিষ্টি।
দাম কত?
এই বছর ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে লেউড়ি। চাহিদাও ছিল ব্যাপক।
কীভাবে তৈরি এই মিষ্টি?
শুধু মাত্র চিনি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টি বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি হয়। চিনির পাক দিয়ে তৈরি করা হয় এটি। আগুনের আঁচের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। ঠিক ওই তাপেই আঁচ দিয়ে চিনি গলিয়ে পাক তৈরি হয়। তারপর সেই পাক কেটে কেটে ছোট ছোট টুকরো করা হয়। এই মিষ্টি দেখতে চকচকে হয়।
এক সময় পুরাতন মালদার অনেক কারিগর এই লেউড়ি তৈরি করতেন। তাঁরা এই মিষ্টি তৈরিতে পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু এখন কারিগরের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। এখন অনেকেই আর ভাল তৈরি করতে পারেন না। এক মিষ্টি বিক্রেতা জানাচ্ছেন, তাঁরা ভাল করে লেউড়ি তৈরি করতে পারেন না বলে কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করেন। তিনি জানান, পুরাতন মালদায় এক কারিগর আছেন যিনি ভাল তৈরি করেন এই মিষ্টি। তাঁর কাছ থেকেই আনা হয়। পুজোর প্রধান ভোগ এই মিষ্টি হওয়ায় মুলাষষ্ঠীর মেলায় এর চাহিদা থাকে। কিন্তু, শুধুমাত্র এই মিষ্টির টানেই এই মেলায় ভিড় জমান বহু উৎসাহী।
আরও পড়ুন: ঘোষিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার! তালিকায় বাংলার সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী