কলকাতা: লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি নিয়ে অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আপত্তি রাজ্য সরকারের। ফলে বৃহস্পতিবার সন্ধে ৭টা পর্যন্তও নবান্নে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হল না। আর সেই নিয়ে এবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, মামলা বিচারাধীন রয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI) তদন্ত করছে। মামলা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তাই ওই বিষয়ে বৈঠক লাইভ করা যায় না। সেই কারণেই লাইভে আপত্তি জানিয়েছে রাজ্য। কিন্তু গোটা বৈঠক ভিডিও রেকর্ড করার কথা বলা হয়েছিল, যাতে আদালতকেও ভিডিও দেওয়া যেত। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা তাতে রাজি হননি।  


এর আগে ২০১৯ সালে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক লাইভ সম্প্রচার হয়েছিল। এদিন লাইভ করানোয় আপত্তির কারণ হিসেবে মমতা জানান, একবার লাইভ স্ট্রিমিং হয়েছিল বৈঠক। কিন্তু সেই সময় সিবিআই বা সুপ্রিম কোর্টে মামলা ওঠেনি, সেটা মাথায় রাখা দরকার বলে জানান মমতা। তিনি জানান, লাইভ স্ট্রিমিং না হলেও, বৈঠক আগাগোড়া ভিডিও রেকর্ডিং করার কথা বলেছিলেন তাই। সেই মর্মে আদালতের নির্দেশ রয়েছে বলেও জানান।


মমতা বলেন, "টেলিকাস্টের ব্যাপারে ওপেন মাইন্ডেড আমরা। কিন্তু বিচারাধীন বিষয়ে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হয়। সুপ্রিম কোর্টের মামলা নিয়ে যদি আমার হঠাৎ করে টেলিকাস্ট করি, কেউ যদি হঠাৎ কোনও মন্তব্য করেন, যা আগে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মন্তব্যের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে...তাহলে আমার কি দায়বদ্ধতা থাকবে না? আমাদের অফিসারদের কি দায়বদ্ধতা থাকবে না? আমরা এমন কিছু করতে চাইনি, যাতে অচলাবস্থা দূর না হয়।"


নবান্ন থেকে মমতা আজ বলেন, "আমরা স্বচ্ছতার জন্য ভিডিওগ্রাফির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা বিচারাধীন মামলা নিয়ে আলোচনার লাইভ টেলিকাস্ট করতে পারি না। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী আমরা লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারি না। আমরাও চাই নির্যাতিতা বিচার পাক, কিন্তু মামলা আর আমাদের হাতে নেই। আমরা ডাক্তারদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে আলোচনায় রাজি ছিলাম। বিচারাধীন মামলার কারণেই লাইভ সম্প্রচারে সমস্যা আছে। দু'ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও ডাক্তাররা আসেননি। তার পরেও আমরা কোনও পদক্ষেপ করব না। ওঁরা ছোট, তাই ক্ষমা করে দেব। আমি ৩ বার চেষ্টা করলাম।"


মুখ্যসচিব এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের পাঠানো চিঠিতেও জানিয়েছিলেন, লাইভ সম্প্রচার সম্ভব নয়। তবে ভিডিও রেকর্ডিং করা যেতে পারে। এদিন সেই প্রসঙ্গও তোলেন মমতা। তিনি বলেন, "চিঠিতেও লিখেছিলাম, লাইভ সম্প্রচার করতে পারব না। কিন্তু গোটা বৈঠক রেকর্ড করা হবে। আমরা খওলা মন নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। ওঁরা যে কোনও ইস্যু তুলতে পারতেন, মিডিয়াকেও বলতে পারতেন। বৈঠক হলে যৌথভাবেও বিবৃতি দিতে পারতাম আমরা। আদালতের নির্দেশ মানছি বলেই সভাঘর থেকে নয়, নিজের কনফারেন্স রুম থেকে এসে সাংবাদিক বৈঠক করছি, সিস্টেম মেনে। "


মমতা জানিয়েছেন, গোড়া থেকেই খোলা মনে আলোচনার ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। কথা বললেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। একটা কথা নিয়ে আলোচনা শুরু হলে আরও পাঁচটা প্রসঙ্গ ওঠে। আগেও তাঁকে বসিয়ে রেখে বৈঠকে যাননি জুনিয়র ডাক্তাররা। এবার তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক বলেও আশা প্রকাশ করেন মমতা।