কলকাতা: প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের (Pranab Mukherjee) নামে কলকাতায় রাস্তা তৈরির নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রবিবার মহালয়ার দিন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) পাড়ার পুজো, চেতলা অগ্রণীর দুর্গাপুজো উদ্বোধনে যান মমতা। সেখানেই শহর কলকাতার মেয়র ফিরহাদকে এমন নির্দেশ দেন। সেখানে মমতাকে বলতে শোনা যায়, "ববিকে বলব, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে শহরের একটি রাস্তার নামকরণ করতে। একটি পার্কের নামকরণও যদি করা যায় দেখতে হবে।"


প্রণবের নামে রাস্তা, পার্কের নামকরণের নির্দেশ মমতার


রবিবার মহালয়ার দিন ঠাসা কর্মসূচি ছিল মমতার। প্রথমে তৃণমূলের মুখপত্র 'জাগো বাংলা'র শারদীয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। তার পর শহরের একগুচ্ছ পুজো প্যান্ডেল উদ্বোধনে বেরোন। বরাবরের মতো এ বারও ফিরহাদের পাড়ার পুজোর উদ্বোধন হয় মমতার হাতেই। দেবীমূর্তিতে নিজেহাতে চক্ষুদানও করেন। সেখানেই প্রণবের নামে রাস্তা এবং পার্কের নামকরণের নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি একডালিয়া এভারগ্রিনের কাছে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একটি মূর্তি স্থাপের নির্দেশও দেন।

 

উল্লেখ্য একডালিয়া এভারগ্রিন সুব্রতর পুজো হিসেবেই পরিচিত ছিল। একই সঙ্গে প্রয়াত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বামে লেক গার্ডেন্সে একটি পার্ক তৈরিরও নির্দেশ দেন মমতা। প্রয়াত নির্মলা মিশ্র, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের নামেও শহরে রাস্তা এবং পার্কের নামকরণের নির্দেশ দেন। দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2022) ইউনেস্কো স্বীকৃতি প্রাপ্তির কথাও এ দিন তুলে ধরেন মমতা। 

 


 

প্রয়াত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মমতার সম্পর্ক নানা ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসে থাকাকালীন একাধিক বিষয়ে প্রণবের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধের কথা শোনা যায়। নিজের আত্মজীবনীতেও মমতার উল্লেখ করেন প্রণব। নিজের বই 'দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স'-এ মমতাকে 'জন্ম থেকে বিদ্রোহী' হিসেবে উল্লেখ করেন প্রণব। তবে মমতার ব্যক্তিত্ব এমনই যে তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা অথবা উপেক্ষা করা, দু'টোই অসম্ভব বলে লেখেন প্রণব। মমতা যে জায়গায়, নির্ভীক চিত্তে লড়াই করেই সেখানে পৌঁছেছেন বলেও লেখেন প্রণব। 

 

শুধু তাই নয়, ১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম-এর সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মমতার জয়ের কথাও বইয়ে উল্লেখ করেন প্রণব। তিনি লেখেন, "মমতার জয় ছিল অভাবনীয়। অপ্রতিরোধ্য হিসেবে উঠে আসেন মমতা। তার পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনে বরাবর কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়েছেন মমতা। সাহসের সঙ্গেই তার মোকাবিলা করেছেন এবং প্রত্যেক কঠিন পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন।"

 

একডালিয়ায় সুব্রতর মূর্তি বসানোর নির্দেশ

 

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দূরত্ব তৈরি হলেও, প্রণবের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে কখনও কার্পণ্য করেননি মমতাও। প্রণবের মৃত্যুতে তাঁকে অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করেন মমতা। শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে লেখেন, 'গভীর দুঃখের সঙ্গে আজ লিখতে হচ্ছে। ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায় আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। একটা যুগের অবসান ঘটল। যুগ যুগ ধরে অভিভাবকস্বরূপ ছিলেন উনি। প্রথম বার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া থেকে সংসদের সতীর্থ, ওঁর রাষ্ট্রপতি হওয়া থেকে আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া, কতশত স্মৃতি রয়েছে।  দিল্লি গেলে প্রণবদার সঙ্গে দেখা না করার কথা ভাবতেই পারতাম না। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি, সব ক্ষেত্রে বিদগ্ধ ছিলেন উনি। চিরকাল ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। ওঁর অভাব বোধ করব'। একই ভাবে শেষ সময়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের হাসপাতালে ভর্তি থেকে শেষকৃত্য, আগাগোড়া যুক্ত ছিলেন মমতা।