কলকাতা: বালিগঞ্জে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় কয়লাপাচারের যোগ রয়েছে বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। এমনকি এই ঘটনায় বাংলার প্রভাবশালী এক রাজনীতিকের যোগ রয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। খাস কলকাতার বুকে ফের টাকা উদ্ধারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তাকে কাজে লাগিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী শিবিরের নেতারাও, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kartik Banerjee) সঙ্গে অভিযুক্তের যোগসাজশ নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। সামনে এনেছেন মমতা কার্তিকের সঙ্গে অভিযুক্তের ছবিও। তার পাল্টা এ বার শুভেন্দুর সঙ্গে একমঞ্চে অভিযুক্তের ছবি সামনে আনলেন কার্তিক। শুভেন্দু নোংরা রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ তুললেন তিনি। তবে মনজিৎকে অনেক দিন ধরে চিনতেন, সে কথাও জানিয়ে দিলেন অকপটে।
বালিগঞ্জের যে অফিসে তল্লাশি চালিয়ে, ইডি প্রায় দেড় কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করে, সেটি নির্মাণকারী সংস্থা গজরাজ গ্রুপের ডিরেক্টর বিক্রম সাকারিয়ার। বিজেপির অভিযোগ, যে বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে, তার মালিক মনজিৎ সিংহ গ্রেওয়ালের। ইডি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এক মন্ত্রীর হয়ে বেআইনি টাকার লেনদেনেও যুক্ত ছিলেন বিক্রম। আর ব্যবসায়ী মনজিতের মাধ্যমে কয়লা পাচারের চেষ্টা করছিলেন এক প্রভাবশালী রাজনীতিক। এ নিয়ে শুভেন্দু এবং বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলকে আক্রমণ করতে নেমে পড়েছেন। ট্যুইটারে পর পর কিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যাতে মমতার পাশে গুরুদ্বারে দেখা গিয়েছে মনজিৎকে। আবার কার্তিকের সঙ্গে পাড়ার জমায়েতেও দেখা গিয়েছে।
ওই ছবি পোস্ট করে শুভেন্দু লেখেন, 'মনজিৎ সিংহ গ্রেওয়াল ওরফে জিত্তা, ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব সামলেছিলেন। ইডি-র বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর নাম উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর রাজনীতিক ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছবিতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা যেমন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, এ বারও কি তেমন অবস্থান নেবেন তিনি'? এর পাল্টা এবিপি আনন্দে মুখ খুললেন খোদ কার্তিক। সেখানে কথোপকথনের মাঝে একমঞ্চে মনজিতের সঙ্গে শুভেন্দুর ছবি তুলে ধরলেন তিনি।
এ দিন এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে কার্তিক বলেন, "আমি জিত্তাদাকে বহুদিন ধরে চিনি। বহু বার ওঁদের বাড়িতে গিয়েছি। বলা হচ্ছে, ওঁর বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে। আদৌ ওঁর বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়নি। এটা আমি নিশ্চিত ভাবে জানি যে, যেখান থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, সেটি ওঁর বাড়ি নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুরুদ্বারে গেলে, সেখানে কে থাকবেন, কে থাকবেন না...(এ সব কে বলে দেবে?) শিখরা ধর্মভীরু মানুষ। তাঁদের অসম্মান করার অধিকার কি কারও আছে?"
মনজিৎ এবং জিত্তাকে যে বহু দিন ধরে চেনেন, তা-ই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তোলেন কার্তিক। তাঁর কথায়, "আমার সঙ্গে ওঁদের বহুদিনের সম্পর্ক। জ্ঞানত কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করি না। এ সব যাঁরা বার করছেন...আমার মনে হয়, ইডি-তে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও মানুষ। সত্য-মিথ্যা নিশ্চয়ই বিচার করে দেখবেন। শুধু রাজনীতি করে হবে না।"
শুভেন্দুকেও এ দিন কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন কার্তিক। তাঁর অভিযোগ, একসময় শুভেন্দু খোদ মনজিতের হোটেলে খেতে আসতেন। তাঁর কাছেও মনিজিতের হোটেলে খেতে যাওয়ার কথা বলেছেন বার। যে মনজিতের ওখানে খেতে যাওয়ার আবদার করতেন শুভেন্দু, সেই মনজিৎ দু'দিনে অসৎ হয়ে গেলেন কী ভাবে, প্রশ্ন তোলেন কার্তিক। মনজিতের তৃণমূল সংযোগের কথাও অস্বীকার করেননি কার্তিক। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন, মনজিৎ তৃণমূলের হিন্দি সেলের দায়িত্বে ছিলেন। তা খারিজ না করেই কার্তিক জানান, দক্ষিণ কলকাতার অধিকাংশ মানুষই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। এমন অনেক সেলও রয়েছে তাঁদের। মনজিৎ তাতে সভাপতিত্বও করেছেন। তাতে কোথাও কোনও অন্যায় দেখছেন না তিনি। বরং মনজিৎ প্রচুর দানধ্যান করে থাকেন, গুরুদ্বারের সঙ্গেও যুক্ত বলে জানান।