কলকাতা: জমি আন্দোলন ভবিষ্যতের পাথেয় হয়ে উঠেছিল অনেক পরে। পিতৃতান্ত্রিক বঙ্গ রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান তারও আগে, যার সূত্রপাত ঘটেছিল তিন দশক আগের এক ২১ জুলাই (Mamata Banerjee)। তদানীন্তন যুব তৃণমূল নেত্রী মমতার জন্য জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সতীর্থরা, রক্তে রাঙা হয়েছিল শহর কলকাতা। সেই থেকেও আজও ২১ জুলাই দিনটিকে 'শহিদ দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে তৃণমূল। এবছরও তার অন্যথা হচ্ছে না। রাত পোহালেই তৃণমূলের ২১ জুলাই সমাবেশ, তাকে ঘিরে গমগম করছে শহর। নিজে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গেলেন মমতা (TMC Shahid Diwas)।


বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মতলায় প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গেলেন মমতা। যে মঞ্চে অনুষ্ঠানের আয়োজন, সেখানে পৌঁছন তিনি। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু সেন। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গেও নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয় মমতার।পাশাপাশি বসে সকলের সঙ্গে মাটির ভাঁড়ে চা পানও করেন। বরাবরই ২১ জুলাাই সমাবেশের প্রস্তুতি দেখতে যান মমতা। এবারও সেই রীতি বজায় রাখলেন। 


২১ জুলাই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের কাছে আবেগের দিন, উন্মাদনার দিন। সেই মতো বুধবার রাত থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসতে শুরু করেছেন শহরে। তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করতে হয়েছে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, কসবা গীতাঞ্জলী স্টেডিয়াম, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম সহ বিভিন্ন জায়গায়। গতকালই ওই জায়গাগুলি পরিদর্শন করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের ২১ জুলাই শুধু 'শহিদ দিবস' হিসেবেই ন, 'শ্রদ্ধা দিবস' হিসেবেও পালন করছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার বলি হওয়া দলের কর্মীদের শ্রদ্ধা জানাতেই এমন সিদ্ধান্ত।


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: কাল তৃণমূলের ২১ জুলাই সমাবেশ, নিয়োগ দুর্নীতিতে সোমবার পর্যন্ত রক্ষাকবচ অভিষেককে


এর বাইরেও, এবারের ২১ জুলাই সমাবেশ রাজনৈতিক কারণেও তৃণমূলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়ী হওয়ার পর প্রথম ২১ জুলাই সমাবেশ এটি। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগের শেষ ২১ জুলাই সমাবেশও। তাই মঞ্চ থেকে মমতা কী বার্তা দেন, সেদিকে তাকিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকরা। 


১৯৯৩ সালে প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন মমতা। রাজ্যে তখন সরকার বামেদের, বিরোধীর ভূমিকায় কংগ্রেস। সেই সময় সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন মমতা। পাঁচ দিক থেকে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। মমতা নিজেও রাস্তায় নামেন। সেই সময় তাঁর সতীর্ত হিসেবে পাশে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, প্রয়াত পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই। কিন্তু সেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। তাতে ধুন্ধুমার বাধে।


পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় যুব কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের। ধাক্কাধাক্কি, কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা। তাতে পরিস্থিতি আরও চরমে ওঠে। পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বোমাও পড়ে বলে অভিযোগ সামনে আসে। তাতে পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। সবমিলিয়ে ১৩ জন মারা যান। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দাবি ছিল, মহাকরণ দখল করতে আসায় গুলি চালিয়েছে পুলিশ।


খাস কলকাতার বুকে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আলোড়ন পড়ে যায় সর্বত্র। তার পর যদিও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মমতা। নিজের নতুন দলকে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলার রাজনীতিতে। বাংলার তিন-তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। কিন্তু আজও নিয়ম করে ২১ জুলাই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন তিনি।