শিবাশিস মৌলিক, আবীর দত্ত ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার সিপিএমকে আক্রমণই কি কংগ্রেস ও বামেদের আরও কাছাকাছি এনে দিচ্ছে ? বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদে রাহুল গান্ধীর ন্য়ায়যাত্রায় যোগ দিলেন মহম্মদ সেলিম এবং সুজন চক্রবর্তী। পাল্টা নদিয়ার সভা থেকে সুর আরও চড়ালেন তৃণমূলনেত্রী। এরই মধ্য়ে শুক্রবার বীরভূমে রাহুল গান্ধীর ন্য়ায় যাত্রার র্যালির অনুমতি দিল না প্রশাসন।
মুর্শিদাবাদে রাহুল গান্ধীর ন্য়ায় যাত্রায় হাতের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার কাস্তে হাতুড়ি তারার পতাকা। মহম্মদ সেলিম থেকে সুজন চক্রবর্তীর মতো সিপিএমের শীর্ষ নেতারা যখন রাহুলের যাত্রায় অংশ নিলেন, তখন মুর্শিদাবাদ থেকে মালদা হয়ে নদিয়া...লাগাতার মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের আক্রমণের মুখে সিপিএম ও কংগ্রেস। তৃণমূলনেত্রী সুর চড়িয়ে বলেন, 'প্লিজ দয়া করবেন যে সিপিএম লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্য়া করেছে, নাপিত বয়কট করেছে, ঘর বয়কট করেছে, মুন্ডু কেটে ভাসিয়ে দিয়েছে জলে, সিঙ্গুরে তপশিলি মেয়ে তাপসী মালিককে পুড়িয়ে হত্য়া করেছে, নন্দীগ্রামে একটার পর একটা মানুষকে হত্য়া করে হলদি নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে ঘর করতে রাজি নই।'
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'বার্তা স্পষ্ট, মমতা ব্যানার্জি সিপিআইএমের কাঁধে বন্দুক রেখে কংগ্রেসকে গাল দিচ্ছে এবং বিজেপির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যখন বেঙ্গালুরুতে বৈঠক হয়েছিল, তখনও আমাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখনও আমরা আবার বলেছিলাম, ট্রেনে তো সবাই ওঠে, কিন্তু কে কোথায় নামবে তার গ্যারান্টি আমরা দিতে পারি না। মমতা এখন বলছেন যে গাড়িটা থামাও, আমরা নেমে যাব। আমরা বলছি স্বাগত।'
ফরাক্কা থেকে সামশেরগঞ্জ, সুতি থেকে রঘুনাথগঞ্জে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল কংগ্রেস এবং সিপিএমের পতাকা।
হুড খোলা জিপের মাথায় রাহুল গান্ধী। পাশে মাথায় ফেট্টি বেঁধে অধীর চৌধুরী। দু'ধারে কংগ্রেসের পতাকা, কেউ ছুটে আসছেন, কেউ হাত নাড়ছেন, কেউ আবার মোবাইল ফোনে রাহুলকে ক্য়ামেরাবন্দি করছেন। পথের দু'ধারে তরুণ থেকে বৃদ্ধ...তরুণী থেকে মহিলা... কোথাও ভিড় দেখে থমকে গেল রাহুলের জিপ। টানা হাত নাড়তে নাড়তে কারও সঙ্গে হাতও মেলালেন রাজীব-তনয়। আবার কোথাও কোথাও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের দেখা গেল রাহুলের জিপের আগে ছুটতে। বিড়ি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি, বিড়ি বাঁধতেও দেখা গেল রাহুলকে। নিজের একদা গড়ে রাহুল গান্ধীর সামনে শক্তিপ্রদর্শনের পর কার্যত খুশি অধীর চৌধুরী। তাই নাম না নিলেও দশমীর প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে খোঁচা দিতে ছাড়লেন না তিনি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'ষষ্ঠীর পুজো, সপ্তমীর পুজো, অষ্টমীর পুজোর যেমন ফারাক হয়। গতির ফারাক হয়, জেল্লার ফারাক হয়, এটাও বাড়ছে। যত রাহুল গাঁধী এগিয়ে যাচ্ছেন তত তার জেল্লা বাড়ছে। তত তার আকর্ষণ বাড়ছে। তত তার নতুনত্ব বাড়ছে। নবমীর পর বিসর্জন হয়। কারও আগমন হবে, কারও বিসর্জন হবে, এটাই হবে বাংলায়।'
এপ্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী এখানে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট চান। ওঁর সঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট আছে। তবে, সেটা এখানে নয়। পর্দার আড়ালে, গাছের আড়ালে। ঘরের কোণে। মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী ভোট ভাগ করার জন্য, যতটা অক্সিজন জোগানোর প্রয়োজন আছে, কংগ্রেস এবং সিপিএমকে ততটাই করছেন।'
কিন্তু, মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি লোকসভা আসনের মধ্য়ে কোনওক্রমে এখন মাত্র ১টা ধরে রাখতে পেরেছে কংগ্রেস। বাকি দুটিই তৃণমূলের। রাহুল গান্ধীর যাত্রায় এই ভিড় কি ভোটও এনে দিতে পারবে? সেটাই বড় প্রশ্ন।