কলকাতা: '৫ হাজার নয় রাজ্যজুড়ে পুরসভায় অন্তত ৬ হাজার চাকরি বিক্রি'। অয়ন শীলকে জেরা করে অনুমান ইডির। সূত্রের খবর, 'কতগুলি পুরসভার সঙ্গে অয়নের সংস্থার চুক্তি হয়েছে? এবিএস ইনফোজোনকে মেল করে জানতে চাইল ইডি। ৩টি ব্যাঙ্কের কাছেও চাওয়া হয়েছে অয়নের সংস্থার অ্যাকাউন্টের তথ্য। 'অয়নের ফ্ল্যাটের ডাস্টবিন থেকে পাওয়া কাগজে একাধিক পুরসভার নাম'। ডাস্টবিনেই মিলেছিল পুরসভায় চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা।
তদন্তে জানা গিয়েছে,'পুরসভার টেন্ডারেও একচেটিয়া আধিপত্য অয়ন শীলের! ইডির অনুমান বরাত পেতে নিজেরই একাধিক সংস্থার নামে দরপত্র জমা দিতেন অয়ন'। টেন্ডার প্রক্রিয়াকে আইনসম্মত করতে ছক। একাই একাধিক দরপত্র জমা দেওয়ায় সুযোগ পেত না অন্য সংস্থা, অনুমান ইডির।
৫ হাজার নয়, রাজ্যজুড়ে পুরসভায় অন্তত ৬ হাজার চাকরি বিক্রি হয়েছিল। অয়ন শীলকে জেরা করে এমনটাই অনুমান ইডির। কতগুলি পুরসভার সঙ্গে অয়নের সংস্থার চুক্তি? এবিএস ইনফোজোনকে মেল করে জানতে চাইল ইডি, খবর সূত্রের। ED সূত্রে খবর, ৩টি ব্যাঙ্কের কাছে চাওয়া হয়েছে অয়নের সংস্থার অ্যাকাউন্টের তথ্য। অয়নের ফ্ল্যাটের ডাস্টবিন থেকে পাওয়া কাগজে একাধিক পুরসভার নাম। ডাস্টবিনেই মিলেছিল পুরসভায় চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা, দাবি ইডি সূত্রে।
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে সকলকে চমকে দিয়ে সামনে এসেছে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ! এবার পুর নিয়োগে দুর্নীতিতেও সামনে চলে আরও বিস্ফোরক তথ্য! ৫ হাজার নয়। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন পুরসভায় অন্তত ৬ হাজার চাকরি বিক্রি হয়েছে। কমপক্ষে ৬০-এর বেশি পুরসভায় এই চাকরি বিক্রি করা হয়েছিল।
ইডি সূত্রে দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটারকে জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে। সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যে পুর নিয়োগে চাকরি বিক্রির একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
শেষপর্যন্ত এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না খোদ তদন্তকারীরাই! কিন্তু কীভাবে সামনে এল পুর নিয়োগে দুর্নীতির তথ্য?
ইডি সূত্রের খবর, অয়ন শীলের অফিসের কোনায় একটি ডাস্টবিন দেখতে পান আধিকারিকরা। সেটি খুলে দেখা যায়, বেশকিছু কাগজ মুড়িয়ে এবং ছিড়ে তাতে ফেলা রয়েছে। এরপর সেই কাগজগুলি বের করে পরীক্ষা করতে শুরু করেন অফিসাররা। তখনই সেখানে একাধিক কাগজে পুরসভার নাম, টাকার হিসেব ও অন্যান্য তথ্য পাওয়া যায়।
যা দেখে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। ইডি সূত্রে খবর, কাগজগুলি দেখিয়ে অয়ন শীলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর কথায় অসঙ্গতি মেলে। তারপরই অয়ন শীলের অফিসে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপ খুলে সেখান থেকে পুর নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক ডিজিটাল এভিডেন্স পাওয়া যায়। আর এই প্রেক্ষাপটেই সামনে চলে এসেছে, গত শুক্রবার, ইডির তল্লাশি শুরুর আগের দিনই অয়নের মোবাইলে আসা এক রহস্যময়ীর মেসেজের প্রসঙ্গ! যেখানে বলা হয়েছিল, পালিয়ে যাও। জিনিসপত্র সরিয়ে দাও। ED আসতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ওই রহস্যময়ীর মেসেজের পরই অনেক নথিপত্র নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন অয়ন শীল? নাকি, ইতিমধ্যেই নিয়োগ সংক্রান্ত অনেক নথি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে? এই সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে অয়ন শীলের বাড়ির সামনে কাজ করা এক সাফাইওয়ালার বক্তব্য। যিনি দাবি করছেন, গ্রেফতার হওয়ার আগের কয়েকদিনে তাঁর অফিস থেকে প্রচুর কাগজপত্র ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
ইডি সূত্রে দাবি, অয়ন শীলের সংস্থা ABS Infozone pvt ltd-এর কাছে মেল করে, রাজ্যের কতগুলি পুরসভার সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছিল, তার একটা তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। ৩টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কাছে অয়নের অ্যাকাউন্টের বিশদ বিবরণ ও লেনদেনের তথ্যও চেয়েছে ইডি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন ছাই না হলেও, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলের অফিসের কোণায় পড়ে থাকা একটি ডাস্টবিনই সামনে এনে দিল রাজ্যের পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির কথা!