সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের ধাক্কা রাজ্যের, ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ রাজ্যের আবেদন। পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের রায় বহাল, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় বহাল। রায় বহাল রাখলেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
দুই সিঙ্গল বেঞ্চের পর ডিভিশন বেঞ্চেও খারিজ রাজ্যের আবেদন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গল বেঞ্চের পর বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চেও খারিজ রাজ্যের আবেদন। পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও বিপাকে রাজ্য। শিক্ষা ও পুরসভায় নিয়োগ, এই দুই দুর্নীতি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আরও বড় দুর্নীতির রূপ নিয়েছে, পর্যবেক্ষণে জানাল ডিভিশন বেঞ্চ।'শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের বাড়ি থেকে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার স্বপক্ষে নথি ও প্রমাণ মিলেছে', এই মর্মে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইডি, তার প্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে ফেরত পাঠায়। তার সঙ্গে এজলাস পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়। তারপরেই মামলা যায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। সেখানেও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রাখা হয়। তারপরে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য।
বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে পুর নিয়োগের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় রাজ্য। রাজ্যের আবেদন খারিজ করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। এরপর বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। শিক্ষা সংক্রান্ত মামলা তাঁর বিচার্য বিষয় নয় বলে মামলা থেকে সরে দাঁড়ায় বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। নতুন ডিভিশন বেঞ্চ নির্ধারণের জন্য মামলা ফেরত যায় প্রধান বিচারপতির কাছে। ইতিমধ্যে সিবিআই তদন্তের ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের গ্রীষ্মের অবকাশকালীন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেননি বিচারপতি বসু, ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সেখানে রাজ্যের জানানো দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ হয় আগামী ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দিন স্থির হয়। এরপর কলকাতা হাইকোর্টে শুনানির জন্য বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি। ৫ ঘণ্টা শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টে মামলার কথা জানতে পারেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী, এরপরই সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার করে রাজ্য।
এই মামলা যখন চলছে একদিকে। তখন রাজ্যজুড়ে একাধিক জায়গায় মোট ২০টি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। একাধিক পুরসভায় তল্লাশি চালানো হয়। অয়ন শীলের বাড়ি-অফিসেও তল্লাশি চালানো হয়। এর পরদিনই বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিলেন, শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় খোঁজ পাওয়া ওএমআর শিট যেখানে ছাপা হয়েছিল, পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ওএমআর শিটও সেখানে ছাপা হয়েছে। ফলে দুই মামলায় আলাদা করা যায় না। একটি মামলা যখন সিবিআই তদন্ত করছে, তখন অন্য মামলা কীভাবে রাজ্য পুলিশ তদন্ত করবে। এমনই মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি। এদিন রায় দেওয়ার সময়েই সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে। দুই নিয়োগ দুর্নীতিকে আলাদা করা যায় না। দুটিরই তদন্ত একই তদন্তকারী সংস্থা করবে। ফলে পুর নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের রায়ই বহাল রাখলেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
আরও পড়ুন: একের বেশি ফর্ম ১৬ থাকলে কীভাবে ফাইল করবেন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ? রইল সহজ সমাধান