রাজীব চৌধুরী ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, গোঠা (মুর্শিদাবাদ) : কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) বিচারপতির ভর্ৎসনার চারদিন পর মুর্শিদাবাদের গোঠা হাই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির (Recruitment Scam) অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করল CID। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন ডিআই। যদিও মূল অভিযুক্ত অনিমেষ তিওয়ারি এখনও অধরা।
সোমবার আদালতের ভর্ৎসনা, শুক্রবার অ্যাকশন। মুর্শিদাবাদের গোঠা এ রহমান হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতার করল CID। রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, কলকাতায়, ভবানীভবনে জিজ্ঞাসাবাদের পর মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাক্তন ডিআই পূরবী দে বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বহরমপুরে সিআইডি অফিসে গ্রেফতার করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা শিক্ষা দফতরের কর্মী নিত্যগোপাল মাজি এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অঞ্জনা মজুমদারকে।
গোঠা হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় এই নিয়ে মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করল CID। সিআইডি-র ডিএসপি শিমুল সরকার বলেন, ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিওর জানার ব্যাপার আছে। আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের মধ্যে কিছু প্রশ্ন উঠতেই থাকে। আমাদের আরও কিছু ক্ল্যারিফিকেশন দরকার আছে।
CID-র ভূমিকায় আমি একেবারেই সন্তুষ্ট নই়। এমন কোনও কড়া মন্তব্য করতে বাধ্য করবেন না, যার নেতিবাচক প্রভাব CID-র ওপর পড়ে। গোঠা এ রহমান হাইস্কুলে নিয়োগ কেলেঙ্কারির অভিযোগের তদন্তে রাজ্য়ের তদন্তকারী সংস্থার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে গত সোমবার এমনই মন্তব্য করে হাইকোর্ট। CID-কে কার্যত ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
চলতি বছরের শুরুতেই, গোঠা এ রহমান হাইস্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস তিওয়ারি। একই স্কুলে ভূগোলের শিক্ষক তাঁর ছেলে, অনিমেষ তিওয়ারি। বাবা যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সেই স্কুলে অবৈধভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ ওঠে ছেলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, অন্যের নিয়োগপত্র ও সুপারিশপত্র জাল করে স্কুলে চাকরি পেয়েছেন অনিমেষ। এই ঘটনায়, গত ১৯ জানুয়ারি CID-কে তদন্তভার দেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। DIG-CID'র নেতৃত্বে বিশেষ দল গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি, অভিযুক্ত অনিমেষের বেতন বন্ধেরও নির্দেশ দেয় আদালত।
তদন্তে নেমে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গোঠা এ রহমান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস তিওয়ারিকে গ্রেফতার করে সিআইডি। কিন্তু তাঁর ছেলে অনিমেশ তিওয়ারি এখনও অধরা ! অভিযুক্তকে কেন গ্রেফতার করা গেল না ? কোন আধিকারিকের বদান্যতায় অভিযুক্ত বেতন পেতেন সেটা এখনও খুঁজে বের করা গেল না কেন ? এমন একাধিক প্রশ্ন তুলে CID তদন্ত নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। প্রয়োজন পড়লে এই আধিকারিকদের Special Investigation Team বা SIT থেকে বাদ দেওয়া হবে। আদালতের কড়া পর্যবেক্ষণ তাদের সার্ভিস বুকে লেখা থাকবে। একথাও জানিয়ে দেন বিচারপতি বসু।
হাইকোর্টের তিরস্কারের ৪ দিন পর আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করল CID। মুর্শিদাবাদের বর্তমান DI এবং জেলা শিক্ষা দফতরের আরও এক আধিকারিককেও এদিন বহরমপুরের CID অফিসে এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।