অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: সাড়ে ১৯ ঘণ্টা পার। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) জীবনকৃষ্ণ সাহাকে তাঁর আন্দির বাড়িতে নজরবন্দি করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই (CBI)। আজ ভোর সোয়া ৪টে নাগাদ সিবিআইয়ের আরও একটি দল পৌঁছয় তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে। সিবিআই সূত্রে খবর, গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন নিজের দুটি মোবাইল ফোন বাড়ির পুকুরে ফেলে দেন জীবনকৃষ্ণ। শ্যালো পাম্প এনে রাত সাড়ে ১০টা থেকে পুকুর ছেঁচে জোড়া ফোনের খোঁজে শুরু হয় তল্লাশি। বিধায়ককে নিয়ে তাঁর বাড়ির আমবাগানেও তল্লাশি চালান সিবিআই আধিকারিকরা।
সিবিআইয়ের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বিভিন্ন জনের মুখে উঠে এসেছে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার নাম। সেই সূত্রে গতকাল বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দুটি গাড়িতে বিধায়কের আন্দির বাড়িতে পৌঁছয় সিবিআইয়ের ৬ জনের দল, সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী। একইসঙ্গে রঘুনাথগঞ্জে বিধায়কের শ্বশুরবাড়িতেও হানা দেয় সিবিআই। শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি অভিযান দুপুর আড়াইটে নাগাদ শেষ হলেও, বিধায়কের বাড়িতে রাতভর ম্যারাথন তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চলে।
অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন বিকেল ৫টা নাগাদ নিজের দুটো মোবাইল ফোন ছুড়ে বাড়ির পুকুরে ফেলে দেন তৃণমূল বিধায়ক। এরপরই পুকুর ছেঁচে তল্লাশি শুরু হয়। তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শুধু টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া নয়, চাকরিপ্রার্থীদের নামও সুপারিশ করতেন তিনি। বিধায়কের বিরুদ্ধে চাকরির নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগও উঠেছে।
সিবিআই সূত্রের দাবি, হঠাৎ করে গোয়েন্দাদের হাত থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে বাড়ি লাগোয়া পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। গোয়েন্দাদের ধারনা, বিধায়কের ফোনে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাই পুকুর থেকে বিধায়কের ফোন উদ্ধারে তৎপরতা শুরু হয়। ততক্ষণে রাত নেমেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায়, পাম্প বসিয়ে পুকুরের জল ছেঁচে ফেলে বিধায়কের মোবাইল ফোন উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আরও পড়ুন, আজ পয়লা বৈশাখ, কালীঘাট-দক্ষিণেশ্বর-তারাপীঠে পুজো দেওয়ার ভিড়
সিবিআই সূত্রের খবর, বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়ি থেকে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া গেছে। চাকরি প্রার্থীদের তালিকা কবে, কোথায়, কত টাকার লেনদেন হয়েছে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে মোবাইল ফোনে থেকে। তাই বিধায়কের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে ফরেন্সিক তদন্তে পাঠাতে চান গোয়েন্দারা। এমনটাই সিবিআই সূত্রের খবর।
এদিন দুপুরে রঘুনাথগঞ্জে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার শ্বশুরবাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আরেকটি দল। এ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'এর পয়সার অভাব নেই, কিন্তু গোটা বড়ঞা জানে, শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় ইনি সরাসরি জড়িত। এর নামের পাশ থেকে MLA উঠিয়ে দিয়ে লেখা হোক। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল বিধায়কের বাড়িতে রেড হচ্ছে।'
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'তৃণমূল গোটা দলটাই তো দুর্নীতিতে জর্জরিত...সিবিআই কখন কোথায় যাচ্ছে জানি না, সেটা তাদের ব্যাপার।' নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে কৌশিক ঘোষ নামে এক এজেন্টকে গ্রেফতার হন অফিসাররা। সিবিআই সূত্রের খবর, চাকরি দেওয়ার নামে কৌশিক ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন বলে আদালতকে জানানো হয়েছে। CBI সূত্রে আরও দাবি, বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার ঘনিষ্ঠ ছিলেন কৌশিক। অভিযোগ অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে, ওই এজেন্টকে দিতেন জীবনকৃষ্ণ। ২০২১-এ বিধায়ক হওয়ার আগে থেকেই তিনি নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত।