প্রদ্যোৎ সরকার, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, নদিয়া:  কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও ভূগোলের শিক্ষকের তুমুল মারপিট। নদিয়া জেলা স্কুল পরিদর্শককে তদন্তের নির্দেশ দিল স্কুল শিক্ষা দফতর। শুক্রবারের মধ্যে দিতে হবে রিপোর্ট। ঘটনা সামনে আসার পরই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় রাজ্য সরকার। এই লজ্জাজনক  ঘটনায় রাজ্য উদ্বিগ্ন। সঙ্গে সঙ্গেই জেলাশাসকের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট চাওয়া হয়। জানা গেছে, সেই রিপোর্ট এসেছে। এরপরই জেলা স্কুল পরিদর্শককে আগামী শুক্রবারের মধ্যে বিস্তারিত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।


বৃহস্পতিবার খুলবে স্কুল।  তার আগে বুধবার এমনই  নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল, নদিয়ার ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল। সংবাদমাধ্যমের সামনেই মারপিটে জড়ালেন প্রধান শিক্ষক ও ভূগোলের শিক্ষক। চলল  ধাক্কাধাক্কি... কিল... চড়... ঘুষি। বাদ গেল না কিছুই।  পে স্লিপ না পাওয়া-সহ একাধিক অভিযোগে এদিন প্রধানশিক্ষকের ঘরের সামনে, প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিলেন ভূগোলের শিক্ষক নিমাই মজুমদার।


এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রধান শিক্ষক। সামনেই ছিলেন ভূগোলের শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক কথা বলার মাঝেই, তাঁর উপর চড়াও হন বিক্ষোভকারী শিক্ষক। পাল্টা হাত চালান প্রধান শিক্ষকও।


অন্য শিক্ষকরা কোনওরকমে সামলান দু’জনকে। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস পরে বলেছেন, (ঘটনাটি খুবই বাজে হয়েছে। উনি আমাকে পিছন থেকে মারেন। আমি ডিসব্যালেন্সড হয়ে যাই। এটা না হলেই ভাল হত। সামলাতে না পেরে আমি প্রহার করেছি।


কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ভূগোলের শিক্ষক নিমাই মজুমদার বলেছেন,  আমি তো কর দিই, ডিসেম্বর থেকে পে স্লিপের জন্য ঘুরছি। দেড় মাস ধরে ঘোরাচ্ছেন, আমি একাই অবস্থান বিক্ষোভে ছিলাম। হেড মাস্টার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন হঠাৎ বলেন, এই যে মর্যাদার কথা বলছেন, আমার সামনে একজন ওনাকে জুতো মেরেছেন। তখনই আমি ওকে চাটি মারতে যাই।


১৭৫ বছরের কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল। একসময় এই স্কুলেই পড়েছিলেন রামতনু লাহিড়ি,দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা...পড়াশোনা করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বন্ধু, হেমন্ত কুমার সরকারও।সেই ঐতিহ্যবাহী স্কুলেই দুই শিক্ষকের মারপিট! যা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্কুলের প্রাক্তনী থেকে শুরু করে বিদ্বজনেরা।


শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার (Pabitra Sarkar) বলেন, "এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। অনুচিত ঘটনা। শিক্ষক হিসেবে তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে লজ্জিত হওয়া উচিত এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত।" এটা খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা। বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ধিক্কারযোগ্য ঘটনা।


ইতিমধ্যেই স্কুল শিক্ষা দফতর গোটা বিষয়টির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নদিয়ার স্কুল পরিদর্শককে। শুক্রবারের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই জেলাশাসকের তরফ থেকে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। তবে জেলা স্কুল পরিদর্শকের রিপোর্ট মেলার পরই রাজ্য সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে সূত্রের খবর।