সুজিত মণ্ডল ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, নদিয়া: নাটকের রূপকে 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস', তৃণমূলের 'হাতে আক্রান্ত' অভিনেতা-পরিচালক। নদিয়ার রানাঘাটে নাট্যকর্মীকে মারধরের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ। মারধরের পাশাপাশি নাট্যকর্মীর বাড়ি লাগোয়া রিহার্সালের ঘর ভেঙে ফেলারও হুমকির অভিযোগ। 'নাটকে তুলে ধরা হয়েছে হাথরস থেকে বগটুই, হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ড', হুমকি দিয়ে বলে এগুলো করা যাবে না, অভিযোগ আক্রান্ত নাট্যকর্মীর। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন নাট্য ব্যক্তিত্বরা।


নাটকে রূপকের মাধ্য়মে তুলে ধরা হয়েছিল, হাথরস, বগটুই এবং হাঁসখালির ঘটনা। সে কারণেই রানাঘাটে এক নাট্যকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেনের মতো নাট্য়ব্য়ক্তিত্বরা। যদিও হুমকি, হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতা।


কবি ভারভারা রাওয়ের লেখা কবিতার উপর ভিত্তি করে, তৃণমূল ও বিজেপির সমালোচনায় নাটক মঞ্চস্থ করার জেরে রানাঘাটে এক নাট্যকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। আনুলিয়া বিনপাড়ার বাসিন্দা, নাট্যকর্মী নিরুপম ভট্টাচার্য। তাঁর নাট্যদলের নাম 'সৃজক'। গত রবিবার রাতে 'কসাই' নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন তাঁরা। নিরুপমের বক্তব্য, কবি ভারভারা রাওয়ের কবিতার ভিত্তিতে রচিত 'কসাই' নাটকের, মূল বিষয়বস্তু হল - রাষ্ট্রই প্রকৃত কসাই। যেখানে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের হাথরসের পাশাপাশি, তৃণমূল শাসিত বাংলার বগটুই ও হাঁসখালির ঘটনাও রূপকের মাধ্যমের তুলে ধরা হয়। অভিযোগকারী নাট্যকর্মী নিরুপম ভট্টাচার্য বলেন, 'আমরা কেন কসাই নাটকটি করছি? এর বিষয়বস্তু হল- রাষ্ট্রই আসল কসাই। এটাই আমাদের বলতে দেওয়া হবে না। তাঁরা হুলিয়া জারি করে, এই যে রানাঘাটের একটা অন্তরঙ্গ স্পেশ, ডাকঘর নাম, জুলাইয়ে উদ্বোধন করি। এগুলি ওরা বন্ধ করতে চায়, তারা একেবারে বলে, এখানে কোনও কর্মকাণ্ড করা যাবে না।'


অভিযোগ, নাটক মঞ্চস্থ করে ফিরে আসার পরই, নিরুপমের ওপর চড়াও হন কয়েকজন। যাঁদের মধ্যেই ছিলেন আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য দেবাশিস কাহারও। নিরুপম ভট্টাচার্য বলেন, 'সৌজন্য বিনিময়ের মতো কথা বলতে আসেন। জানতে চায় দাদা সরকার কেমন কাজ করছে? আমি বলি- সেটা ভোটেই জানা যাবে। নানা কথা বলতে বলতে, প্রথমে সৌজন্য, রাগারাগি করতে করতে আমার গায়ে হাত দিয়ে দেয়। কারা মারে? সেই সময় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য দেবাশিস কাহারের নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটে।'এই যে ডাকঘর, এখানে নাট্যপ্রেমীদের নিয়ে নাটকের আসর বসানো হয়, একই সঙ্গে নাটক যেমন মঞ্চস্থ করা হয়, তেমনি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেটাই ভেঙে ফেলা হবে এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা-কে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ তোলা হয়। আক্রান্ত নাট্যকর্মীর মা শিখা ভট্টাচার্য বলেছেন, 'পরশু রাত সাড়ে ১১টায় ওরা খুব মারধর করেছে ছেলে। ছেলে বাড়ি এসেছে বাবাকে ডেকেছে। চোর বদনাম দিয়েছে, কোনও সন্তান কি সহ্য করতে পারবে না। এখানে আসার পর ১০-১২জন ছেলে হুমকি দিয়েছে।'


এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন নাট্য়ব্য়ক্তিত্বরা। কৌশিক বলেন, 'এই নাটকে বিজেপি ও তৃণমূলের রাজ্যের সম্পর্কেও আছে। কিন্তু সংস্কৃতির ধ্যানধারণা সম্পর্কে অশিক্ষিত তৃণমূল বুঝতে পারেনি।' নাট্যকর্মীকে মারধর ও হুমকির অভিযোগে, শাস্তির দাবিতে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব ঋদ্ধি সেন। প্রবল সমালোচনার মুখে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য।


অভিযোগ অস্বীকার:
দেবাশিস কাহার বলেন, 'আমরা নিরুপমকে বড়দা বলে ডাকি, ওই দিন রাতে যা যা হয়েছে, সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। যা অভিযোগ তুলছেন, তা মিথ্যা, ঘর ভাঙার কথা বলা হয়নি। নাটক বন্ধের কথা বলা হয়নি। আমরাই চাঁদা তুলে সাহায্য করি, কখনও উনি এলাকায় নাটক করলে, আমরাই খরচ করে পরিষ্কার করে দিই। উনি মানসিকভাবে সুস্থ নয়।'


তৃণমূল নেতা একথা বললেও, অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠন APDR। সংগঠনের কৃষ্ণনগর শাখার তরফে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। নাট্যকর্মী নিরুপম ভট্টাচার্যর দাবি, তিনি প্রথমে রানাঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু FIR-এর বদলে স্রেফ জিডি করা হয়েছে। এরপর রানাঘাট পুলিশ জেলার SP-র কাছেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। 


আরও পড়ুন: রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে হঠাৎ আগুন, আতঙ্ক এলাকায়