সমীরণ পাল, সন্দেশখালি : হাইড্রোলিক মেশিন বসিয়ে দিনে-রাতে বিদ্যাধরী নদী (Bidyadhari River) থেকে চুরি করে নেওয়া হচ্ছে নদীগর্ভস্থ বালি। ফলে, এলাকায় ভূমিধসের (Landslide) আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই সাদা বালি নদী থেকে তুলে ট্রাকের মাধ্যমে শহরাঞ্চলে পাঠানোর পাশাপাশি ইটভাটাতেও বিক্রি করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যাধরী নদী থেকে বালি চুরি বন্ধ করা হোক, এই মর্মে প্রশাসনিক দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছেন এলাকাবাসী। নদী থেকে বালি চুরি করায় তৃণমূলের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর। 


নদী থেকে মাটি বা বালি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের ন্যাজাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পারশেমারী এলাকায় দিনের আলোয় এলাকার কিছু মাটি মাফিয়া নদীগর্ভস্থ বালি তুলে নিচ্ছে। ট্রাকে ভর্তি করে সেই বালি দিনের পর দিন ইটভাটা থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলে বিক্রি করছে। 


এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, নদীর মাঝখানে নৌকায় রয়েছে হাইড্রোলিক মেশিন। নদী থেকে সাদা বালির খাদানে চলে এসেছে মোটা সবুজ রঙের পাইপ। সেই পাইপের মাধ্যমে নদীর ভূগর্ভস্থ বালি জমা হয় ইটভাটার মধ্যে খাদানে। সেখান থেকে ট্রাকে বোঝাই করে বালি চুরি করা হয় এবং সেই বালি ইটভাটা থেকে শহর অঞ্চলে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছে বালি খাদানের পাশে থাকা ট্রাকের খালাসি। ক্যামেরা দেখেই ট্রাকের দরজা বন্ধ করে দেন চালক। নদী থেকে কারা বালি চুরি করছে ? প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, পেট চালাতে কাজ করছি। মালিকের নাম বলতে পারব না।


এদিকে এভাবে লাগাতার বালি তোলায়, নদীবাঁধের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা।


এনিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা শঙ্কর চট্টোপাধ্য়ায় বলছেন, 'বিদ্যাধরী নদী থেকে প্রকাশ্যে সাদা বালি চুরি হচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসনের একাংশের মদতে। এভাবে বিদ্যাধরী নদী থেকে বালি তোলা হলে এলাকায় ভূমিধস অনিবার্য। বিজেপির পক্ষ থেকে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।'


যদিও বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ন্যাজাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হেনা দাস মাহাতো। তাঁর দাবি, নদী থেকে এভাবে বালি চুরি করা আইনত অপরাধ। এই ধরনের কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। বালি চুরির পেছনে তৃণমূলের মদত নেই। বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। এলাকায় তাদের অস্তিত্ব নেই। তাই ভিত্তিহীন অভিযোগ। 


সন্দেশখালি ১ নম্বর এলাকার বিএলআরও অলোক সেনাপতি জানিয়েছেন, কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে বিদ্যাধরী নদী থেকে বালি চুরি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। এখানে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


কবে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন? কবে বন্ধ হবে বেআইনিভাবে বালি চুরি? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মনে।