সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: রান্নার বাসন থেকে খাওয়ার পাত্র কিংবা দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রী। একসময় মাটির (Bengal Pottery Craft) তৈরি জিনিসই ব্যবহার হতো সমাজের সব স্তরে। কিন্তু কালের প্রভাবে ধীরে ধীরে অস্তমিত এই শিল্প। প্লাস্টিক থেকে স্টিলের সামগ্রী এখন বাজার দখল করেছে। কারুকাজ আর পুজো-পার্বণের জন্য প্রয়োজনটুকুই এখন মেটানো হয় মাটির তৈরি জিনিসে। হারিয়ে যাওয়া বাজার, ক্রমশ নিম্নমুখী বিক্রি সত্ত্বেও মৃৎশিল্প আঁকড়ে ধরে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার একটি পরিবার। মৃৎশিল্পীদের সেই পরিবারের হাত ধরেই এখনও টিকে রয়েছে মৃৎশিল্পের এই ধারা।


উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) দেগঙ্গার (Deganga) সোহাই শ্বেতপুরের পাল পরিবার। মাটির তৈরি হরেকরকম জিনিস তৈরি করেন এই পরিবারের সদস্যরা। আগে হাঁড়ি-কড়াই, থালা-বাটি তৈরি করলেও এখন সেসবের চাহিদা তেমন নেই বলে সেগুলি বানানো হয় খুব একটা। তার বদলে মাটির তৈরি নানা ঘর সাজানো সামগ্রী তৈরি করেন তাঁরা। তাঁদের তৈরি মৃৎশিল্পের এই নির্দশন দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে পাড়ি দেয় বিদেশে। পরিবারের সদস্যের দাবি, অন্তত ১০০ বছর ধরে তাঁদের এই পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বংশ পরম্পরায় এই শিল্পের ধারা প্রবাহিত হয়েছে এই পরিবারে।  


দেগঙ্গার সোহাই শ্বেতপুর পালপাড়াতে পাল পরিবারের (Pal Family) বাড়িতে দেখা গেল, বিভিন্ন ধরনের শৌখিন সামগ্রী তৈরি করতে ব্যস্ত গোটা পরিবার। শিল্প কারুকাজ দেখলে অবাক হতেই হবে। অতি নিপুণ দক্ষতায় রূপ পাচ্ছে মাটির তৈরি ওই জিনিসগুলি। একঝলকে দেখলে হঠাৎ করে মাটির তৈরি জিনিস বলে মনে নাও হতে পারে। ওই পরিবারের বর্তমান সদস্য, মৃৎশিল্পী রঞ্জিত পাল জানাচ্ছেন, গত ১০০ বছর ধরে বংশপরস্পরায় এই শিল্পের ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন তাঁরা। মাটির হাঁড়ি-কড়াই, বাসনের চাহিদা এখন প্রায় লুপ্ত। তাই সেগুলি বাদ দিয়ে শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে টেরাকোটাকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের হাতের কাজ দেশ-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছে বলেও জানাচ্ছেন তিনি। রঞ্জিত পাল বলেন, 'আমাদের তৈরি এই সৌখিন সামগ্রী মুম্বই ,পুনে, বেঙ্গালুরু, কেরলে যায়।' শুধু তাই নয়, আমেরিকা-জাপান-কানাডাতেও এই সামগ্রীগুলি পাঠানো হয় বলে জানাচ্ছেন তিনি। নিউটাউনের ইকো পার্কের মেলাতেও এসেছিল তাদের পসরা।


রয়েছে বহু বাধা:
রঞ্জিত পাল জানাচ্ছেন, শিল্পের কাঁচামাল মাটি বহুদূর থেকে আনতে হয়। প্রয়োজন হয় কাঠ, কয়লা-সহ আরও নানা কাঁচামাল। দিনের পর দিন লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচামালের দাম। দাম বেড়েছে পরিবহন খরচেরও। ফলে জিনিসের দামও বাড়ছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় অংশ নেয় এই পাল পরিবার। শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন, বলছে সেই পরিবার।


আরও পড়ুন: ঘোষিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার! তালিকায় বাংলার সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী