ইসলামপুর, সুদীপ চক্রবর্তী : এলাকায় শান্তি বজায় রাখার কথা জানিয়ে তাঁকে ফোন করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সাম্প্রতিককালে তৃণমূলনেত্রীর বিরুদ্ধে একাধিকবার ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পর এবার এমনই দাবি করলেন ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। বিজেপির কটাক্ষ, সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়ে দলের বিদ্রোহী বিধায়কের কাছে মাথানত করতে বাধ্য হলেন তৃণমূলনেত্রী।


পঞ্চায়েত ভোটের আগে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের রাজনীতিতে নতুন ট্যুইস্ট ! দুয়ারে সরকার শিবিরে শাসকনেতার হামলা !
আর সেই ঘটনার সূত্র ধরেই কি তৃণমূলের অন্দরে অভিমানের ক্ষতে প্রলেপ পড়ল ? আব্দুল করিম চৌধুরীর মনে জমে ওঠা ক্ষোভের বরফ কি গলতে চলেছে এবার ? উত্তর দিনাজপুরের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জল্পনা।


ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরীর দাবি, এলাকায় শান্তি বজায় রাখার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার তাঁকে ফোন করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ডাইরেক্ট উনি আমাকে কল করলেন। কোনও অফিসার না, কোনও নেতা না। উনি ডাইরেক্ট আমাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বললেন, করিমদা, দেখুন ইসলামপুরে কী হয়েছে। আপনি সিনিয়র নেতা। শান্তি রাখবেন। কোনও ঝামেলা যেন না হয়। আমি বললাম, দিদি ঠিক আছে। কোনও ব্যাপার নয়।


যদিও এনিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের জেলা সহ সভাপতি সুরজিৎ সেন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী কি আদৌ ফোন করেছিলেন ? এটা ওরা বলছে। কিন্তু কেউ দেখেনি। যদি করে থাকে, তাহলে বলব সংখ্যালঘু তোষণের জন্য শেষমেশ করিম চৌধুরীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে মাথানত করতে হল। কারণ সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তৃণমূলের থেকে সংখ্যালঘু ভোট সরছে।

সাম্প্রতিককালে একাধিক ইস্যুতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যু থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই। একাধিক ঘটনায় তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশকে কাঠগড়ায় তুলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শানান আবদুল করিম চৌধুরী। নিজেকে বিদ্রোহী বিধায়ক হিসেবেও ঘোষণা করেন তিনি। তাঁর পাঠানো প্রার্থী তালিকায় সিলমোহর না দিলে তাঁদের নির্দল হিসেবে দাঁড় করাবেন, পঞ্চায়েতের টিকিট বিলি নিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন আবদুল করিম। আর এই প্রেক্ষিতেই, গত এক মাসে ইসলামপুর মহকুমায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ৪ জন তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ ওঠে। বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালে দুয়ারে সরকার শিবিরে তৃণমূল নেতার হামলার ঘটনা।
বৃহস্পতিবার, ইসলামপুরের দিঘলবস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুয়ারের সরকারের ক্যাম্পে তাণ্ডব চালিয়ে গ্রেফতার হন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আকবর আলি, যিনি আবার আবদুল করিমের মনোনীত হিসেবে পরিচিত। ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়কের দাবি, ওই ঘটনার পরই তাঁকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।


এনিয়ে আব্দুল করিম চৌধুরী বলেন, মমতাদিদিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যে কোনও অন্য নেতার মাধ্যমে না, কোনও সেক্রেটারির মাধ্যমে না বলে, উনি ডাইরেক্ট আমাকে নেত্রী হিসেবে অনুরোধ করলেন বা নির্দেশ দিলেন, করিমদা ইসলামপুরে শান্তি রাখতে। উনি ২০১৯-এর পর ডাইরেক্ট কনট্যাক্ট করলেন ৪-৫ বছর পরে। ওঁকে ধন্যবাদ জানাই। যা বলার আপনিই বলবেন। অন্য নেতাদের দিয়ে কথা চালাবেন না।


এ প্রসঙ্গে সুরজিৎ সেন বলছেন, করিম যেভাবে বারবার মুখ্যমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন, সংখ্যালঘু ভোটের তাড়না না থাকলে এভাবে তেল মাখাতেন না। এটা একটা নতুন দৃষ্টান্ত।

শেষমেশ হামলার ঘটনার সূত্র ধরেই কি অভিমানের মেঘ কাটতে চলেছে এবার ?