কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সোমনাথ মিত্র ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা : তৃণমূলের একাংশ সামনে নিয়ে আসছে 'বায়রন থিয়োরি'। তার পাল্টা অধীর চৌধুরী বললেন, তৃণমূল ছেড়ে পঙ্গপালের মতো মানুষ ছুটে আসছেন কংগ্রেসের দিকে। এনিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপিও।
পর পর বোমাবাজি, গুলি, রক্তারক্তি, গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আবরোধ। পঞ্চায়েতে ভোটে হিংসা-অশান্তির চেনা ছবি ফিরেছে মনোনয়নপর্বেই। বিরোধীরা যখন, 'সাগরদিঘি মডেল'কে সামনে রেখে, জমি আঁকড়ে থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দিচ্ছেন, তখন, তৃণমূলের একাংশ সামনে নিয়ে আসছেন 'বায়রন থিয়োরি'।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, 'অন্য প্রতীকে জিতলে, বায়রনের অনুভূতি সংক্রমিত হবে। অন্য চিহ্নে জিতলে ভোটের পর তৃণমূলে আসবে। তাহলে অহেতুক কেন অন্য চিহ্নে ভোট দেবেন ?'
২০২১-এর নির্বাচনে যেখানে গোটা রাজ্যে খাতাই খুলতে পারেনি কংগ্রেস, সেখানে ৬৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে বামেদের সমর্থনে জয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। রাতারাতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিল 'সাগরদিঘি মডেল'। কিন্তু, ২৯ মে, কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বায়রন বিশ্বাসকে ভাঙিয়ে নেয় তৃণমূল।
পঞ্চায়েত ভোটের পরও, এই একই ছবি দেখা যাবে বলে কার্যত ভবিষ্যদ্বাণী করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ডমিনেন্ট শক্তি। ব্যক্তিগতদের কোনও শক্তি নেই। আলাদা করে জিতে কেউ কিছু করতে পারবে না। তৃণমূলের বাইরে কিছু নেই। প্রশাসন তৃণমূলের পাশে আছে। অন্য পার্টিগুলো ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর মত। তাদের কোনও রোল নেই। প্রধানের উপর পঞ্চায়েত নির্ভর করে। একজন জিতে কী করতে পারে ? প্রধানের কাছেই যেতে হবে। প্রধানের কাছেই ক্ষমতা। কাজ করতে গেলে প্রধানের কাছে যেতে হবে। আলাদা করে কিছু হবে না। পঞ্চায়েত, বিধানসভা নয় যে চেঁচামেচি করবে !'
তৃণমূলের 'বায়রন থিয়োরি' নিয়ে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস-বিজেপি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'তৃণমূল ছেড়ে পঙ্গপালের মতো মানুষ ছুটে আসছে কংগ্রেসের দিকে। তৃণমূল দলে এখন মহামারী লেগেছে, কোনও বুদ্ধিমান লোক মহামারী আক্রান্ত এলাকায় তো যেতে চাইবে না। বায়রন বিশ্বাস গেছেন, কেন গেছেন আপনারা জানেন, অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছি।'
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'আগে ভোট হোক তারপর দেখা যাবে, লড়তে দিতে হবে।'
'বায়রন থিয়োরি'কে সমর্থন করে, ঘুরিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তিনি বলেন, 'বিরোধীরা বোঝাতে চাইছে, সাগরদিঘির মতো ১:১ হলে, তৃণমূলকে হারাতে পারবে ! কিন্তু লাভ কী হল ? ক'দিনের মধ্যে তো বায়রন তৃণমূলে ফিরে এল। যদি দেখা যায় আপনাদের পাওয়া ভোটে জিতে, প্রার্থী তৃণমূলে চলে এল, তাহলে তৃণমূল ছাড়া ভোট দিয়ে সম্মান নষ্ট করছেন কেন ? তৃণমূলই একমাত্র দল, যে জিতে অন্য পার্টিতে যাবে না। তাই 'ভোট ফর তৃণমূল'। নো ভোট টু আদার পার্টি।'
এই তরজার মধ্যেই হবে পঞ্চায়েত ভোট। মানুষের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। তাঁদের কর্তব্য কিন্তু, সেই মানুষের রায়কে মর্যাদা দেওয়া। এলাকার উন্নয়ন করা। তা কী হবে? না কি ফের ঘোড়া কেনাবেচা হবে?