সনৎ ঝা, মোহন প্রসাদ, উমেশ তামাং: দীর্ঘ  দুই দশক পর দার্জিলিংয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Elections 2023)। তাতে খুশি পাহাড়ের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই। তবে দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েতের পরিবর্তে, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। একইসঙ্গে পাহাড়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিরোধীরা (Darjeeling News)।    


পাহাড়ে শেষ বার পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল ২০০০ সালে। তার পর আর পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখেননি দার্জিলিংবাসী। পাহাড়বাসীর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটের দাবিও দীর্ঘদিনের। অবশেষে গোটা রাজ্য়ের সঙ্গেই আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে চলেছে পাহাড়েও।


তবে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে নির্বাচন নয়, ভোট নেওয়া হবে পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে। এ নিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র তথা তৃণমূল নেতা গৌতম দেব বলেন, "এটা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তিনি পাহাড়ের কোনায় কোনায় গিয়েছেন। ওঁর ভাবনা ছিল, পাহাড়ের পঞ্চায়েত ব্য়বস্থাকে সম্প্রসারিত না করলে জিটিএ বা অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না। এটা পাহা়ড়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এতদিন পাহাড়বাসী সংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।"


আরও পড়ুন: Coal Scam: 'BJPতে যোগ না দিলে, জেলে যেতে হবে', হুমকির অভিযোগ বিনয় মিশ্রের ভাইয়ের


ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপার কথায়, "পঞ্চায়েত ভোট পাহাড়ে অনেক দিন ধরে হচ্ছে না। আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। পঞ্চায়েত ভোট পাহাড়ে খুব দরকার। আমাদের মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছিলেন। সরকারকে বুঝিয়ে ব্য়বস্থা করা হয়েছে। নির্বাচনী ইস্তেহারেও ঘোষণা করেছিলাম। সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি নির্বাচন হতে চলায়।"


সূূত্রের খবর, বিভিন্ন সমস্য়ার জন্য় ২০০০ সালের পর থেকে দার্জিলিংয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করানো যায়নি। ২০১১ সালের জিটিএ চুক্তিতে পাহাড়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের উল্লেখ রয়েছে। তবে তার জন্য় সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। কিন্তু সংবিধান সংশোধন না হওয়ায়, দার্জিলিংয়ে এবার ত্রিস্তরীয় নয়, দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েতে নির্বাচন হবে। 


তবে দীর্ঘদিন পর পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুশি সব রাজনৈাতিক দলই। তবে কারও কারও মতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে নির্বাচন হলেই ভাল হত।  সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, "২২ বছর পর পঞ্চায়েতের নির্বাচন হচ্ছে। এটা তো খুবই আনন্দের! আমি এটাকে ওয়েলকাম করছি। ক্ষমতা জিটিএ-র হাতে আছে। কিন্তু, ক্ষমতা জনগণের কাছে দিতে হলে পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচন দরকার। দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। পাহাড়েও পঞ্চায়েত নির্বাচন বাধ্য়তামূলক। গ্রাসরুটে মানুষের কাছে ক্ষমতা যাবে। তার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।"


তবে ত্রিস্তরীয় পঞ্চয়েতে নির্বাচন না হওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁর বক্তব্য়, "এটা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে পাহাড় এবারও বঞ্চিত থেকে গেল ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে ভোট থেকে। পাহাড়ে দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট হবে। পঞ্চায়েতের মাধ্য়মে কেন্দ্রীয় সরকার তার বিভিন্ন প্রকল্প মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে সারা দেশ জুড়ে। এক্ষেত্রে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত না থাকার ফলে পাহাড়ের মানুষ। যে সুবিধা পেতে পারত তা হবে না।"


এ ব্যাপারে একমত দার্জিলিংয়ে কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারও। তাঁর বক্তব্য, "এটা সরসারি পাহাড়ের মানুষকে ২২ বছর বঞ্চিত করা হল। পঞ্চায়েত ব্য়বস্থার মধ্যে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা গ্রামীণ স্তরে মানুষ পেয়ে থাকেন। ২২ বছর মানুষকে তা থেকে বঞ্চিত করা হল। এখন নির্বাচন ঘোষণা করেছে সেটাও একটা প্রহসন হতে চলেছে। এই ভোট সুষ্ঠুভাবে হবে আমরা কখনই মনে করি না।"


পাহাড়ের রাজনীতি সবসময় পাল্টাতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে কে কার সঙ্গে জোট বাধে, সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।