কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সঞ্চয়ন মিত্র ও জয়ন্ত পাল, কলকাতা: ইতিহাসের সরকারি পাঠ্যবই। সেখানে রয়েছে সিঙ্গুর আন্দোলনের প্রসঙ্গ। ওই লেখাতেই রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম। ইতিমধ্যে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে জেলে রয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে বারবার ওই বই থেকে পার্থর নাম মোছার দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। যদিও শোনা যাচ্ছে, আগামী শিক্ষাবর্ষেও যে নতুন বই থাকবে, তাতে থাকবে পার্থ চট্টোপাধ্যেয়ের নাম। তবে, পাঠ্যবই থেকে বাদ যাচ্ছে, মানিক ভট্টাচার্য ও কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম।


কোথায় পার্থর নাম:
অষ্টম শ্রেণির সরকারি ইতিহাস বইয়ের ১৬৩ নম্বর পাতা, যেখানে বর্ণনা রয়েছে, সিঙ্গুর আন্দোলনের। সেখানেই এখনও জ্বলজ্বল করছে পার্থর নাম। সেই পার্থ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে এখন গরাদের পিছনে। কিন্তু স্কুলপাঠ্যের বইতে এখনও শিক্ষকদের পড়াতে হচ্ছে তাঁর নাম। কিন্তু এতকিছুর পরও কেন থাকবে তাঁর স্কুল পাঠ্যে? এনিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কিন্তু তারপরেও শোনা যাচ্ছে, তাঁর নাম থাকছে সরকারি স্কুল পাঠ্য় বইয়ে।  


বাদ অন্য দুই নাম:
বাদ পড়ছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও দুই জেলবন্দি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। বিগত বছরে, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের, 'পর্ষদের কথা' নামক অংশে উল্লেখ ছিল, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তত্‍কালীন সভাপতি, মানিক ভট্টাচার্যের নাম। একইভাবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বইয়ের ভূমিকার অংশে রয়েছে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। দুই জনেই এখন দুর্নীতি মামলায় গরাদের পিছনে। সূত্রের খবর, আগামী শিক্ষাবর্ষে এই দু’জনের নাম বাদ যাচ্ছে। মানিক ভট্টাচার্যের বদলে আসছে, পর্ষদের বর্তমান সভাপতি গৌতম পালের নাম এবং কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের জায়গায় আসছে রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। 


রাজ্য সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, 'সরকারের তরফ থেকে পার্থর নাম থাকছে। বাকিদের নাম থাকছে না। নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশ আসেনি।' বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, 'নতুন যে এডিশনের বই এসেছে, তাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম আছে। ফলত ছাত্রদের অনেকের প্রশ্ন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে। আমরা কী উত্তর দেব?'


শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, 'যেরকম বাকিদের নাম বাদ গিয়েছে, সেরকম এটাও বাদ যেতে পারত। সিঙ্গুর আন্দোলনে তাঁর যে ভূমিকা, সেই কারণেই হয়তো রাখা হয়েছে। সিঙ্গুরের এই কেসটা রিভাইসড হতে পারত। তাঁর নাম নিয়ে অনেক সময় টিকা লিখতে হয়। পাঠ্য পুস্তকে এমন অনেক নাম আছে, ইতিহাসে অনেক নাম আছে, যাঁরা পরে কলঙ্কিত হয়েছেন। মানুষের আপত্তি থাকলে ভেবে দেখুক পর্ষদ।'


সোমবারই আদালত থেকে বেরোনোর সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় জোর গলায় জানিয়েছিলেন, তিনি দলের সঙ্গেই আছেন। কেমন আছেন, প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, 'সবাই ভাল থাকুন। সবাই ভাল থাকুন। দলের সঙ্গে আছি।'


রাজনৈতিক তরজা:
তৃণমূলের রাজ্যে সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা ছিল। তখন যেটা করেছে, ইতিহাসে তো উল্লেখ থাকবেই।' বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'দেখুন ওঁর তো দলের সঙ্গে থাকা উচিত। যার জন্য চুরি করেছেন, তার সঙ্গেই তো থাকবেন, দলের জন্যই তো চুরি করেছেন।'


আরও পড়ুন: বিরোধীদের বাঁশ দিয়ে পেটানোর নিদান বিজেপি নেতার, শান্তনু ঠাকুরের সামনেই মন্তব্যে বিতর্ক