মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঁকসা : একমাত্র শিক্ষক অবসর নেওয়ায় বন্ধ হয়ে গেল স্কুলের দরজা। চরম সমস্যায় পড়ুয়ারা। অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেল জঙ্গলমহলের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ। ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। এনিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। যদিও ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন খোদ মন্ত্রী। 


কাঁকসার মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের একেবারে শেষ প্রান্তে রয়েছে গড় জঙ্গল। আর সেই জঙ্গলের মাঝে রয়েছে ছোট্ট গ্রাম আদুরিয়া। দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের পড়াশোনার জন্য ছিল শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। সেখানে ১৫ জন পড়ুয়াও ছিল। কিন্তু, মাসখানেক আগে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক অবসর নেন। তারপর থেকে শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের দরজা। চরম সমস্যার মুখে পড়েন অভিভাবকরা। প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের রক্ষিতপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় সেইসব পড়ুয়াকে। তবে ছয় কিলোমিটার জঙ্গল পেরিয়ে স্কুলে যাওয়া পড়ুয়ারাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।


এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের বক্তব্য, গ্রামের সিংহভাগ মানুষ দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। তাই বেশিরভাগ দিন কাজ ছেড়ে বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। পঠন-পাঠন থেকেও বঞ্চিত হয়ে থাকতে হয়। আচমকা এই শিশু শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম সমস্যার মুখে তাঁরা। রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এবং কাঁকসার বিডিওর কাছেও তাঁরা শিশু শিক্ষা কেন্দ্র পুনরায় খোলার দাবি তুলেছেন।


এ প্রসঙ্গে সুমিত্রা রায়, রাজু সোরেন, সনমনী সোরেনদের অভিযোগ, শিক্ষক যেদিন অবসর নিয়েছেন, সেই দিন থেকে গ্রামের শিশু শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে। তাঁরা বলেন, আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ এখন কী হবে সেই নিয়ে আমরা চিন্তায়। ছয় কিলোমিটার দূরের স্কুলে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়ার সম্ভব হচ্ছে না। আর বাচ্চাদের একা ছাড়াও সম্ভব নয়। কারণ জঙ্গলে রয়েছে নেকড়ে, হায়না, শূকর সহ হিংস্র জীবজন্তু। আমরা চাই, গ্রামের শিশু শিক্ষা কেন্দ্রেই দেওয়া হোক শিক্ষক। শুরু হোক আবার পঠন-পাঠন।


যতদিন এই সরকার আছে ততদিন কিছুই হবে বলে কটাক্ষ করে বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ-সভাপতি রমন শর্মা বলেন, "শিক্ষকের অভাবেই স্কুল বন্ধ। ভাবা যায়। এই সরকার যতদিন থাকবে ততদিন বাংলার শিক্ষার এইরকমই হাল থাকবে।" যদিও রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, "আমরা অভিযোগ শুনেছি। কিন্তু ওই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে মাত্র ১৫ জন পড়ুয়া ছিল। ১৫ জনকে নিয়ে কীভাবে স্কুল চালানো সম্ভব। তবুও আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"