সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতির পর এবার বিএড কলেজের পুনর্নবীকরণে (B.ed College Renewal) দুর্নীতির অভিযোগ (Scam Allegation) । বছরে কমপক্ষে কুড়ি কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রেও উঠল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) নাম। ঘটনায় সিবিআই-ইডির তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে (High Court) জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের হয়েছে।


কী অভিযোগ ?


সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। যার আনুষ্ঠানিক নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টিচার্স ট্রেনিং এডুকেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিন জন সহযোগী- সজল সরকার, সজল কর এবং তপন বেরা। সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ মোট চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। মামলায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সেই কারণেই তিনি এই ধরনের দুর্নীতির করার সুযোগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 


এখন প্রশ্ন উঠছে এই দুর্নীতি তিনি করলেন কীভাবে ?


মূলত অভিযোগ করা হয়েছে, চারটি পর্যায়ে এই দুর্নীতি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রতিটি বিএড কলেছে একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরপর পুনর্নবীকরণের প্রয়োজন পড়ে। নিয়ম হচ্ছে, এই পুনর্নবীকরণের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলেজগুলোর কাছে একটা লিঙ্ক পাঠানো হয়। সেই লিঙ্ক তারা খুলে প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে। সেই নথি গ্রহণ হলে, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি প্রাপ্য ১ লক্ষ টাকা জমা করে। তাহলেই পুনর্নবীকরণের শংসাপত্র হাতে পায়। এই পরিস্থিতিতে অভিযোগ উঠেছে, বহু কলেজের ক্ষেত্রে জুলাই-অগাস্ট মাস নাগাদ এই লিঙ্ক পৌঁছনোর কথা। কিন্তু, সেই লিঙ্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলেজগুলোকে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরে যখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্পলাইনে নম্বরে ফোন করছে, তখন সেখান থেকে অন্য এক ব্যক্তির নম্বর দেওয়া হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই ব্যক্তি ? মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সজল সরকার হচ্ছেন সেই ব্যক্তি। যাঁর নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প লাইন নম্বর থেকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এই সজল সরকার বিশ্বিবদ্যালয়ের সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত নন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। সজল সরকারকে ফোন করা হলে তিনি তাঁর যাদবপুরের বাড়িতে আসতে বলছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের লোকজন যখন সেখানে আসছেন। তখন বলা হচ্ছে, সরকারি প্রাপ্য এক লক্ষ টাকা বাদ দিয়েও নগদে আরও ২ লক্ষ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে লিঙ্ক পাঠানো হবে। 


কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কার্যত বাধ্য হয়ে তারা এই ধরনের ঘুষ দিচ্ছে। দেওয়ার পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে লিঙ্ক পাচ্ছে। তারপরে পুনর্নবীকরণের কাজ শুরু হচ্ছে। এটা দুর্নীতির প্রথম পর্যায়।


দ্বিতীয় পর্যায়ে, কিছু কিছু কলেজ তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিঙ্ক পাচ্ছে। লিঙ্ক পাওয়ার পরে সেখানে তারা ডকুমেন্ট আপলোড করছে। কিন্তু, কোনও অজ্ঞাত কারণে তাদের আবেদনপত্র গৃহিত হচ্ছে না। ফলে, তাদের সেই একই পদ্ধতিতে  - সজল সরকার, সজল কর এবং তপন বেরা-র কাছে ঘুরে আসতে হচ্ছে। ২ লক্ষ টাকা দিতে হচ্ছে। তারপরেই পুনর্নবীকরণ করতে পাচ্ছে।