রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: প্রচারের (Beti Bachao Beti Padhao) ঢক্কানিনাদই সার। কন্যাসন্তান (Girl Child) নিয়ে মানসিকতায় বদল আনা যায়নি এতটুকুও। এ বার তার প্রমাণ মিলল পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) কালনায় (Kalna)। পর পর দুই কন্যাসন্তান হওয়ায় সেখানে এক মহিলার উপর পাশবিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়েছে ওই মহিলাকে। আঘাত করা হয়েছে শরীরে গোপন জায়গাতেও, যাতে লজ্জায় তিনি কাউকে দেখাতে না পারেন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন নির্যাতিতা।  


নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, অত্যাচারের বিষয়টি এত দিন ঘুণাক্ষরে জানতেও পারেননি তাঁরা। সম্প্রতি শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন। অত্যাচার সইতে সইতে বিধ্বস্ত হয়ে তখনই সব কিছু জানান। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাই তড়িঘড়ি কালনা মহকুমা হাসপাতালে নির্যাতিতাকে ভর্তি করেন তাঁর পরিবারের লোকজন। সেখানে চিকিৎসা চলছে তাঁর। মহিলার পরিবার জানিয়েছে, মেয়ে আগো সুস্থ হোক। তার পর এই নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ জানাবেন তাঁরা।


পরিবারকে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, প্রথম বার মেয়ে হওয়ার পর সে ভাবে অসন্তোষ প্রকাশ না করলেও, দ্বিতীয় বারও কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার পর চরম অত্যাচার শুরু করেন তাঁর স্বামী। সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া থেকে শুরু করে শরীরে গোপন জায়গায় আঘাত করা হতো, যাতে ছবি তুলেও কাউকে দেখাতে না পারেন তিনি। গত এক বছর ধরে এমন চলছিল। নির্যাতিতা আরও জানিয়েছেন যে, মাস খানেক আগে থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য জোর করছিলেন স্বামী। সরাসরি জানান, স্ত্রী পছন্দ নয় তাঁর। তাই তাঁকে আর বাডি়তে রাখা যাবে না। কিন্তু নির্যাতিতা বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি না হলে, অত্যাচারের মাত্রা চরমে ওঠে। তাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।  


আরও পড়ুন: Malda News: লরির ধাক্কায় মৃত্যু বাইক আরোহীর, জখম আরও ১


এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে এটা বোঝা দরকার যে, ছেলে না মেয়ে হবে, তাতে স্বামীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মেয়েদের ক্রোমোজোম একই ধরনের হয়। ছেলেদের দু’ধরনের ক্রোমোজম হয়। তাই ছেলে বা মেয়ে হওয়া স্বামীর উপরই নির্ভর করে। এ নিয়ে সমাজে যথেষ্ট সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত।’’


যে ভাবে ওই মহিলার উপর ্ত্যাচার চালানো হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ শাশ্বতী। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলে বা মেয়ে হওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের ভূমিকাই বেশি। তাই যে অত্যাচার তাঁকে সইতে হয়েছে, স্বামীর উপর চা চালাতে পারতেন নির্যাতিতা। অত্যন্ত রাগ থেকে এ কথা বলতে হচ্ছে আমাকে। থানায় অভিযোগ জানালে হয়ত শাস্তি হবে স্বামীর। কিন্তু দুই সন্তানকে নিয়ে নির্যআতিতা কোথায় যাবেন, তাঁর উপর অত্যাচারের ক্ষতিপূরণ, এ সবও দেখতে হবে প্রশাসন এবং নির্যাতিতার পরিবারকে।’’ মামলা দায়ের করলেও, মাঝ পথে তা তুলে নিতে যাতে নির্যাতিতাকে বাধ্য না করা হয়, সে দিকেও প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন শাশ্বতী।