কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : রাজবাড়ির রীতিনীতি ও ঐতিহ্য মেনে পুজোর  ( Durga Puja 2022 )  প্রায় ১৫ দিন আগে কৃষ্ণ নবমীতে ছাগ বলির মধ্য দিয়ে হয় পুজোর সূচনা। দেবীর বোধনের মাধ্যমে শুরু হয় আউসগ্রামের কালিকাপুর রাজবাড়ীর সাত ভাইয়ের দুর্গাপুজো।


৪০০ বছরের ঐতিহ্য
প্রায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ও নিয়ম মেনে কালিকাপুর রাজবাড়িতে আজও পূজিত হন দেবী দুর্গা, যা আউশগ্রামের কালিকাপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় 'সাত ভাইয়ের পুজো' বলেই পরিচিত। রাজপরিবারের সকলেই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। তবে পুজোর কয়েকটি দিন সবাই এসে মিলিত হন রাজবাড়িতে। রাজবাড়ির পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে আসেন বহু মানুষ।


ইতিহাস
৪০০ বছর আগে বর্ধমান রাজার দেওয়ান ছিলেন পরমানন্দ রায়। সেই সূত্রেই তাঁর হাতে আসে কাঁকসার বিরাট একটি অংশের জমিদারিত্ব। ঘনজঙ্গল কেটে তৈরি হয় বসতবাড়ি। তৈরি হয় পুকুর, বাগান। আর পরিবারের দুর্গাপুজো করার জন্য তৈরি হয় দুর্গা মন্দির। পরমানন্দের সাত পুত্রের জন্য তৈরি হয় সাতমহলা প্রাসাদ। এই প্রাসাদই কালিকাপুর রাজবাড়ি বলে খ্যাত। সাত ভাই যেহেতু একত্রে পুজো করতেন তাই রায় পরিবারের এই দুর্গাপুজো 'সাত ভাইয়ের পুজো' বলেই এলাকায় খ্যাত।


রায় পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরমানন্দ ছিলেন কালিকাপুরের পাশের গ্রাম মৌখিরার বাসিন্দা। তবে সেখানে এই বিশাল রাজবাড়ি গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে, তিনি কালিকাপুরে চলে আসেন। সেখানেই তৈরি করেন এই বসতবাড়ি। তাছাড়াও অজয় নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় মৌখিরা গ্রামে ছিল বন্যার প্রকোপ। সেজন্যই কালিকাপুরের জঙ্গলের মাঝে এই রাজবাড়ি তৈরি করেন পরমানন্দ রায়। এখান থেকেই তিনি চালাতেন কাঁকসা ও  আউসগ্রাম এর বিশাল অংশের জমিদারির কাজ। 


প্রাসাদে সাসাতমহলা তটি বাড়ি আলাদা হলেও, পুজো মণ্ডপ রয়েছে একটিই। এখানে রয়েছে তিনদিক ঘেরা একটি আটচালা মণ্ডপ। প্রায় ৪০০ বছর ধরে এখানে পুজো হয়ে আসছে। তবে পরমানন্দ রায়ের বর্তমান বংশধররা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। কিন্তু বোধনের আগেই ফিরে আসেন বাড়িতে। পুজোর আয়োজন করা হয় পরম যত্নে। বাড়ির সকলে মিলে মেতে ওঠেন দুর্গা পুজোর আনন্দে।সেই সঙ্গে 'সাত ভাইয়ের দুর্গাপুজো'কে কেন্দ্র করে আনন্দে মেতে উঠেন কালিকাপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা।


পুজোর রীতি
রাজবাড়ির রীতিনীতি ও ঐতিহ্য মেনে পুজোর প্রায় ১৫ দিন আগে কৃষ্ণ নবমীতে ছাগ বলির মধ্য দিয়ে হয় দেবীর বোধন।দেবীর একচালার প্রতিমা। এছাড়াও ষষ্ঠী, সপ্তমী ও অষ্ঠমীতেও হয় ছাগ বলি। নবমীতে করা হয় অন্নকূটের আয়োজন।বহু পূর্বে নবমীর দিন মহিষ বলি হলেও এখন তা হয়না।


বাদ্যযন্ত্র সহযোগে বোধনের দিন পালকি করে ঘট নিয়ে গিয়ে রায়পরিবারের নির্দিষ্ট পুকুর থেকে জল তোলা হয়। মায়ের ভোগে আতপ চাল ও বাতাসা দেওয়ার রীতি আছে। এছাড়াও মায়ের প্রতিদিনই নিত্যসেবা করা হয়। নিত্য সেবাতেও আতপ চাল ও বাতাসা দেওয়া হয়।


 বলিউড-টলিউডের বহু সিনেমার শুটিং হয়েছে এই কালিকাপুর রাজবাড়িতে। শুটিং করতে এসেছেন টলিউড থেকে বলিউডের নামিদামি অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা। ঋতুপর্ণ ঘোষ থেকে আবির চট্টোপাধ্যায়, অনেকেই এই রাজবাড়িতে এসে নিজেদের ছবির শুটিং করেছেন। 'গয়নার বাক্স' সিনেমাও এই রাজবাড়ীতে শুট করা হয়েছে। অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনীত, 'গুপ্তধন রহস্য'-র শুটিং হয়েছে এখানে। রাজবাড়ির পুজোও দেখানো হয়েছে সিনেমায়। এছাড়াও মৃণাল সেন পরিচালিত নাসিরুদ্দিন শাহ ও সাবানা আজমি অভিনীত 'খন্ডহর' সিনেমার শুটিং হয় কালিকাপুরের এই রাজবাড়িতেই।