রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: একদিকে উপপুরপ্রধানের চেয়ারে রয়েছেন। অন্যদিকে একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সেই ব্যক্তি নাকি দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসছেন না। বাড়িতে বসেই সই করছেন হাজিরা খাতায়। তুলছেন বেতনও। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরে এমনটাই নালিশ করেছেন গ্রামবাসী ও অভিভাবকরা। প্রধান শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করলেও, প্রাথমিক তদন্তে গরমিল ধরা পড়েছে বলেই জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান। 


RTI-এর তথ্য বলছে, উপপুরপ্রধান নিয়মিত ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পুরসভায় থাকেন। এদিকে তিনি দাবি করছেন, তিনি নিয়মিত স্কুলে যান। অবশ্য মাঝে মাঝে বাইরেও যেতে হয় বলে তাঁর দাবি। যাঁকে নিয়ে এই অভিযোগ উঠেছে তাঁর নাম তপন পোড়েল।পূর্ব বর্ধমানের কালনার উপপুরপ্রধান, এবং কালনা পূর্বচক্রের খাঁপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। 


এক ব্যক্তি কী করে দু'জায়গায় কাজ করছেন? এই প্রশ্ন তুলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২ বছর ধরে স্কুলে না আসার অভিযোগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে নালিশ করেছেন গ্রামবাসী ও অভিভাবকেরা। 


স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, কালনা পুরসভায় আরটিআই করে তিনি জানতে চান, তপন পোড়েল উপ পুরপ্রধান হিসাবে কতক্ষণ পুরসভায় কাটান। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়মিত সকাল দশটা থেকে বিকে ৫ টা পর্যন্ত পুরসভায় থাকেন তপন পোড়েল। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলে না এসেও, বাড়িতে বসে হাজিরা খাতায় সই করছেন প্রধানশিক্ষক। 


জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, 'অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। হিয়ারিং-এ ডাকা হবে। অ্যাাটেন্ডেন্টস নেই অনেকগুলি। সেগুলি না হলেই ভাল হত।' তিনি আরও বলেন, 'তপন পোড়েলের অ্যাটেনডেন্স নিয়ে কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। সব রিপোর্ট পেলে তিন পক্ষকে নিয়ে শুনানি করার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'


যদিও ২ বছর ধরে স্কুলে না যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, প্রধান শিক্ষক। খাঁপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক পদে বসা তপন পোড়েল বলেন, 'স্কুলে আসি। প্রচুর কাজ হয়েছে। মাঝে মাঝে বাইরে যেতে হয়। এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত।'


রাজনীতিতে উত্থান:
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০০০ সালে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান তপন পোড়েল। ২০১৬ সালে খাঁপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন।  ২০২১ -এ কালনা শহর তৃণমূলের সভাপতি।  অভিযোগ, এর পর থেকেই স্কুলে আসা কমিয়ে দেন তপন। 


বিজেপির কটাক্ষ:
বিজেপির জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'তপন পোড়েল পার্টি করতেই পারে। কিন্তু স্কুলে না গিয়ে অ্যাটেনডেন্সে সই করা সেটা অপরাধ। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।'


আরও পড়ুন: আয়ার ছদ্মবেশে সদ্যোজাতকে চুরির অভিযোগ, প্রশ্নের মুখে উত্তরবঙ্গ মেডিক্য়াল কলেজ