ঋত্বিক প্রধান ও সৌভিক মজুমদার, কাঁথি: জমি বিবাদ মেটাতে কাঁথি (Contai News) পুরসভার তৃণমূল (TMC) কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সালিশি বসিয়ে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করার অভিযোগ উঠল। ভয়ে-আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দ্বারস্থ হলেন আদালতের। এই অবস্থায় কাঁথি থানার পুলিশকে দ্রুত ওই পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা (Calcutta High Court)।
সালিশি বসিয়ে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করার অভিযোগ
জমি বিবাদ মেটাতে সালিশি। সেখানে ১ লক্ষ টাকার জরিমানা। বাড়িতে থাকতে না দেওয়া। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন স্থানীয় এক বাসিন্দা (Purba Medinipur News)।
এই ঘটনায় বুধবার, অবিলম্বে মামলাকারীর পরিবারকে ঘরে ফেরানোর জন্য, কাঁথি থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল?
গত বছরের ৯ নভেম্বর, কাঁথি পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, শেখ আমিনউদ্দিন স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে বলা হয়, একটি জমিকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে অন্য এক পরিবারের ঝামেলা হয়। অভিযোগ, সেই ঝামেলা মেটাতে সালিশি বসান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অতনু গিরি।
মামলাকারীর আরও অভিযোগ, সালিশিতে তাঁকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন শাসকদলের কাউন্সিলর। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তারপর থেকে এলাকা ছাড়া রয়েছে তাঁর পরিবার। এই অবস্থায় নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলা করেন অভিযোগকারী।
আরও পড়ুন: C V Ananda Bose: ধনকড় অধ্যায় অতীত! হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে মমতার সঙ্গে খোশগল্পে রাজ্যপাল, ধারও মাড়ালেন না বিজেপি নেতৃত্ব
সেই মামলাতেই বুধবার বিচারপতি কাঁথি থানাকে নির্দেশ দেন, পরিবারটিকে দ্রুত, পুলিশি নিরাপত্তায় বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর এলাকায় যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে, সেটাও দেখবে কাঁথি থানার পুলিশ।
মামলাকারীর আইনজীবী ডেভিড ফ্রান্সিস বলেন, "একটি দোকান ছিল। সেটি খোলাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা। ১ লক্ষ টাকা জরিমানা। বাড়ি ছাড়াও করা হয়। কাঁধি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে পুলিশি নিরাপত্তায় বাড়ি ফেরানো হয়।"
কাঁথি থানাকে লেখা অভিযোগপত্রে শেখ আমিনউদ্দিন দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনায় ঘর পাওয়ার জন্যও তাঁর স্ত্রীর কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর। সে টাকা না দিতে পারায়, আবাস তালিকা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যদিও সব ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন শাসকদলের কাউন্সিলর।
অতনু গিরি বলেন, "আমার ওয়ার্ডের ঘটনা। কেউ বাড়িছাড়া করেনি। পুরো মিথ্যে অভিযোগ। কাঁথি থানাও তদন্ত করেছে। আদালতের নির্দেশ শিরোধার্য। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করবে।" সালিশির কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
এই ঘটনায় শুরু তৃণমূল-বিজেপি তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি-র কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অসীমকুমার মিশ্র বলেন, "তৃণমূলের নেতারা যেখানে যেখানে বসে, সেখানেই বিচারব্যবস্থা চালু করছে। সেক্ষেত্রে মানুষের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। মানুষ তাই আইনের দ্বারস্থ হচ্ছে। ভোট যত এগিয়ে আসবে, তত এরকম ঘটনা সামনে আসবে। সাধারণ মানুষের সামনে চেহারা বেরিয়ে পড়বে।"
তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক সভাপতি তরুণকুমার মাইতির বক্তব্য, "আইনের ওপর ভরসা আছে। তদন্তে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরাও চাই তদন্ত হোক। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে।"
পরের মাসে ৭ তারিখ এই মামলার পরবর্তী শুনানি
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত, অভিযোগকারী পরিবারকে ঘরে ফেরানোর জন্য কাঁথি থানার তরফে কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। পরের মাসে ৭ তারিখ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। এদিকে, শেখ আমিনউদ্দিনের দাবি, ভয়ে-আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বর্তমানে ওড়িশার জলেশ্বরে তাঁরা রয়েছেন।