কলকাতা: আরজি করে (R G Kar News) চিকিৎসক ধর্ষণ খুনের ঘটনায় অব্যাহত আন্দোলন। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর। একটাই দাবি বিচার চাই। ৫ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতিতে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এবিপি আনন্দের যুক্তি তক্কো অনুষ্ঠানে এসে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো প্রশ্ন তুললেন 'উদ্দেশ্য বা ঘটনা যদি না জানতে পারি, কীভাবে বলব সুরক্ষিত?' 


অব্যাহত আন্দোলন: চিকিৎসক ধর্ষণ খুনে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। আন্দোলনের আঁচ পৌঁছে গিয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও। গত ৯ অগাস্ট আরজি করেরই সেমিনার হলে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। যুক্তি তক্কো অনুষ্ঠানে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো বলেন, "গত ৯ অগাস্ট আর জি করে একটা ডিপার্টমেন্টের সেমিনার রুমে যে ঘটনা ঘটে চিকিৎসক সমাজ থেকে শুরু করে সমাজের কোনও মানুষ এই ধরনের ঘটনা পরিলক্ষিত করেছেন কিনা যদি জেনে থাকেন জানাবেন। আন্দোলনের শুরু এই ঘটনা মাথায় রেখেই। শুরুতে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে থাকি। আমরা চিকিৎসকরা যেমন মানুষের শারীরিক অবস্থা বুঝতে পারি ঠিক তেমনই যেটা ঘটেছে সেটা কী ঘটেছে এবং কেন ঘটেছে এইটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে। সাধারণ মানুষ অবশ্যই সেটা মনে করেন। এই সন্দেহের জায়গা থেকেই ডাক দেওয়া হয়েছিল, আরজি কর দিচ্ছে ডাক, অভয়া বিচার পাক। বিচার পাক এটাই ছিল মূলত প্রধান এবং ন্যায়সঙ্গত দাবি।'' 


অনিকেতের কথায়, "এই আন্দোলন শুরু হয় চিকিৎসক, প্যারা মেডিক্যাল, নার্সিং পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে। এই নৃশংস ঘটনার পর কলকাতা পুলিশের ব্য়র্থতা উঠতে আসতে থাকে, বিচারের বাণী যেভাবে কাঁদতে থাকে সেখান থেকেই সমাজের সব স্তরের মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, যন্ত্রণার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। তাই ডাক্তার সমাজের আন্দোলন সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে, একজন চিকিৎসকের যদি কর্মক্ষেত্রে এই পরিণতি হয় তাহলে তাঁরা কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন। যে বা যাঁরা এই ঘটনা ঘটাল তাঁরাও তো এই সমাজের মানুষ। অর্থাৎ সামাজিক ব্যধি, ক্ষত আছে। আরজি করের আন্দোলনকারীরা এই আন্দোলনকে সেভাবেই দেখছে। ৯ তারিখ যে ঘটনা থেকে যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম, সারা বাংলার চিকিৎসক সহ সাধারণ মানুষ পাশে এসেছেন। ৯ অগাস্টের ঘটনার পর পুলিশের উদাসীনতা সেটাও দেখা যায়। সাধারণভাবে যে জায়গাটায় একটা কর্ডন করতে হয়, তাও নেই। সেমিনার রুমে কে বা কারা ঢুকছে সেটা সবাই দেখছে। আমরা দাবি করেছিলাম নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, বিচার হোক। দেখা গেল FIR করতে দেরি করছেন। তৎকালীন অধ্যক্ষ সংস্কারের নির্দেশ দিচ্ছেন। তাও আবার সেমিনার রুমের উল্টোদিকটাই করতে হবে। গোটা আরজি কর হাসপাতাল পড়ে আছে তো কাজ করার জন্য।''


নিরাপত্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলে, আন্দোলনরত চিকিৎসক বলেন, "স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল পরিকাঠামো মেনে নিয়েই কাজ করি। অন ডিউটি মহিলার চিকিৎসকের উপর যে আক্রমণ করা হয়েছে তার জন্য নৈতিক দাবি রাখতে পারি না! একজন চিকিৎসক হিসেবে কাল আমার সহকর্মীকে কী করে বলব তুমি কাজে যোগ দাও, তোমার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটবে না। পাস-ফেল, আর্থিক দুর্নীতির যে প্রশ্ন আরজি করের ছাত্ররা এই জিনিস গত ৩-৪ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করেছে। বারবার অভিযোগ জানানো হয়েছে, কোনও সদুত্তর মেলেনি। ১৪ তারিখ রাতে তাণ্ডব ঘটে, তার কী উদ্দেশ্য ছিল? কারা এই ঘটনা ঘটাতে এল? কলকাতা পুলিশের কাছে কোনও সদুত্তর আছে? কী এমন অনৈতিক দাবি রাখছি যে সিপির পদত্যাগ চাইতে পারি না! এই ভীতির পরিবেশ কে বা কারা করতে চাইছে? ১৪ তারিখ রাতের ঘটনা পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা। সিনিয়র চিকিৎসক আমাদের পাশে থেকেছেন। কলকাতা সহ সব সরকারি মেডিক্য়াল কলেজে এমার্জেন্সি এবং নন এমার্জেন্সি পরিষেবা চালু আছে। আমরা শুধু কর্মবিরতিতে আছি। একটা মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট মেডিসিনের সেমিনার রুমে এই ঘটনা ঘটল। তার উদ্দেশ্য কী ছিল? যদি না জানতে পারি, তাহলে আমার সহপাঠী, সহকর্মী, নার্স দিদি, নার্সিং পড়ুয়াদের, প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে কীভাবে বলব যে ডিউটিতে ফেরো। উদ্দেশ্য বা ঘটনা যদি না জানতে পারি, কীভাবে বলব সুরক্ষিত? আপনি CISF দিতে পারেন, কিন্তু উদ্দেশ্য যদি সামনে না আসে তাহলে বলতে পারবেন, ফের কোনও ঘটনাটা ঘটবে না। চিকিৎসক ছাত্র হিসেবে মনে করি, একাধিক লোক জড়িত। যদি তাই তাহলে একজন গ্রেফতার হয়েছে, বাকিরা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কী বলে সহপাঠীকে বলব কাজে ফেরো তোমরা সুরক্ষিত। আমি মনপ্রাণ কাজে ফিরতে চাই, কিন্তু তা চাইলেই যে প্রশ্নে আটকে আছি, তাতেই আবার আটকে যাচ্ছি।''


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।  


আরও পড়ুন: R G Kar Protest: শিক্ষক দিবসে শিক্ষারত্ন প্রত্য়াখ্যান, আর জি কর কাণ্ডে সরব শিক্ষাবিদরা