আবির দত্ত, কলকাতা: প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের চার্জশিটে সামনে এসেছে একের পর এক তথ্য। কীভাবে ফেল করা প্রার্থীদের নাম ঢোকানো হয়েছিল চাকরি প্রাপকদের তালিকায়? কীভাবে OMR শিটে করা হয়েছিল কারচুপি? তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।


কীভাবে অনুত্তীর্ণদের নাম ঢোকানো হয়েছিল? পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ। কিন্তু তথ্য়ের কারচুপিতে তাদের নামই ঢুকে গেছিল WITHHELD-এর তালিকায়। তারপর তারাই আবার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেয়ে গেছিল। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে, এমনই চাঞ্চল্য়কর তথ্য় সামনে এসেছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। সম্প্রতি নিম্ন আদালতে সিবিআই চার্জশিট দিয়েছে OMR শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির প্রোগ্রামার পার্থ সেন এবং ডিরেক্টর কৌশিক মাজির বিরুদ্ধে। এই দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একাধিক ধারা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু, কীভাবে এই জালিয়াতি করা হত? চার্জশিটের ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় সিবিআই দাবি করেছে, ২০১৪ সালের টেট-এর ফল বেরোয় ২০১৬ সালে। সেই পরীক্ষায় ১৫২ জন প্রার্থীর নাম ছিল 'WITHHELD'-এর তালিকায়। অর্থাৎ এমন প্রার্থী, যাদের নথিপত্রে কোনও সমস্য়া আছে। কিন্তু, সিবিআইয়ের চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, এস বসু রায় অ্য়ান্ড কোম্পানির প্রোগ্রামার পার্থ সেন ফেল করা প্রার্থীদের নামও সেই তালিকায় ঢুকিয়ে দেন। সিবিআইয়ের চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, পার্থ সেন এই তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি এবং তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ইমেল করেন। কারচুপি করে যে ফেল করা প্রার্থীদের নাম তালিকায় ঢোকানো হয়েছিল, তাদের বিকাশ ভবনেও ডাকা হয় নথি যাচাইয়ের জন্য়।চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, প্রার্থীদের বোকা বানাতে ভুয়ো ওয়েবসাইট অবধি তৈরি করা হয়েছিল। বিরোধীদের দাবি, এর থেকেই স্পষ্ট যে শুধু OMR মূল্য়ায়নকারী সংস্থার আধিকারিক নয়, প্রশাসনের ওপরতলার অনেকেও এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।


শুধু তালিকা নয়, কারচুপি হয়েছিল OMR শিটেও। চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে, OMR স্ক্য়ানে ইনফ্রারেড প্রযুক্তি সম্পন্ন অত্য়াধুনিক যন্ত্র ব্য়বহার করা হয়েছিল। যেখানে OMR গুলি টেক্সট ফাইল হিসেবে স্টোর হত। যাতে তাতে রদবদল করা যায়। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, স্ক্য়ান হওয়ার পর মূল্য়ায়নকারী সংস্থার তরফে আসল OMR শিট পর্ষদকে দেওয়া হয়নি। আবার তদন্তের সময় তারা OMR-এর ইমেজ কপিগুলিও দেখাতে পারেনি। কারণ, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সেগুলি আগেই ডিলিট করে দেওয়া হয়।নথি নষ্ট নিয়ে আরও চাঞ্চল্য়কর তথ্য় উঠে এসেছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। সেখানে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দাবি করেছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্য়াডহক কমিটি ও এস বসু রায় অ্য়ান্ড কোম্পানির মধ্য়ে একটি বৈঠক হয়।

এরপর পর্ষদের তরফে ওই সংস্থাকে ২০১৪-র টেট সংক্রান্ত গোপন নথি নষ্ট করতে বলা হয়। তদন্তে এস বসু রায় অ্য়ান্ড কোম্পানি জানায়, তারা ওইসব নথি হস্তান্তরিত করেছিল RKVG এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সংস্থাকে। যদিও, তার প্রেক্ষিতে কোনও ওয়ার্ক অর্ডার বা বিল ছিল না। তদন্তে RKVG এন্টারপ্রাইজের এক আধিকারিক আবার দাবি করেন, তাঁরা ওই নথি সত্য়নারায়ণ শ্য়ামসুন্দর HUF নামে একটি সংস্থাকে দেন।  যারা আবার সেই নথি পাঠিয়ে দেয় ইমামি পেপার মিলস লিমিটেডের কাছে। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, শেষ অবধি ওড়িশায় নথিগুলি নষ্ট করা হয়। যদিও, সেই সময় পর্ষদের কোনও আধিকারিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: Ram Mandir Inauguration: রাম মন্দির উদ্বোধন ঘিরে উন্মাদনা, বিশেষ ট্রেন এবং বিমানের বন্দোবস্ত