কলকাতা: তৃণমূলের শিক্ষক নেতা শেখ সিরাজুল ইসলামকে বরখাস্তের নির্দেশ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ তাঁকে বরখাস্তের নির্দেশ দিল। সিরাজুলকে কোনও ভাবেই চাকরিতে রাখা যায় না বলে জানিয়ে দিল আদালত। বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, "হাওড়া স্কুলের শিক্ষক নেতা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছেন। ওই শিক্ষকের নিয়োগ সম্পূর্ণ বেআইনি।" আজ থেকেই বরখাস্তের নির্দেশ কার্যকর করতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। (Recruitment Scam)

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এর আগে সিরাজুলের বিরুদ্ধে FIR করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। FIR-এর প্রভাব যাতে চাকরিতে না পড়ে, তাই আদালতের দ্বারস্থ হন সিরাজুল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিল। সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে তাঁকে চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়ে দিল আদালত। আজ থেকেই নির্দেশ কার্যকরী।  (Calcutta High Court)


সিরাজুলের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ছিল আগে থেকেই। পাশাপাশি, নিয়োগ দুর্নীতিতেও নাম জড়ায় তাঁর। ২০০১ সালেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছিল সিরাজুলের। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে চাকরি করে যাচ্ছিলেন সিরাজুল। এমনকি সম্প্রতি হাওড়া জেলায় তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সাধারণ সম্পাদকও করা হয় তাঁকে। 


নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন উত্তাল পরিস্থিতি রাজ্যে, সেই সময় কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা বিভাগেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। হাইকোর্টে সেই নিয়ে মামলা দায়ের লে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বেআইনি নিয়োগ নিয়ে তদন্ত শুরু করে সেই কমিটি। তাতেও সিরাজুলের নাম উঠে আসে। কিন্তু তার পরও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে কড়া নির্দেশ দেয় আদালত।


এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সিরাজুলকে শিক্ষা সেলে পদ দেওয়া হল কী করে, সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। কেন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হল না, ওঠে প্রশ্ন। অভিযোগ ওঠে, সিরাজুলের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে চাইছিল না পুলিশ। তাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। আর আদালতের ভর্ৎসনার পরই প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হাওড়া সদর থানায় সিরাজুলের বিরুদ্ধ এফআইআর দায়ের হয়।


সেই এফআইআর-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই নতুন করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সিরাজুল। এফআইআর দায়েরের জেরে চাকরিতে যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, আদালতে আবেদন জানান তিনি। বুধবার সেই আবেদনের শুনানি শুরু হয় বিচারপতি মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু শুনানি শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিরাজুলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। হাওড়ার শিবপুর স্কুলে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে এতদিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলন সিরাজুল।