কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন নির্যাতিতার পরিবার। ডাক্তাররা তাঁদের ঘিরে ধরে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন বলে দাবি তাঁদের। জোর করে প্রিন্সিপালের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়, গাড়িতে উঠতে গেলে পুলিশ ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। নয়া এই অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। (RG Kar Case)


রাত দখলে যোগ দিয়ে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন। নির্যাতিতার কাকার বক্তব্য, "২.৪০ বা ৩.১০ হবে। মেয়েকে দেখে বেরিয়েছি। তার কিছু ক্ষণ পর মুখ্যমন্ত্রীর ফোন আসে, কথা বলি। এর পর ডাক্তারবাবুরা আমার দাদা আর বউদিকে একটা ঘরে আটকে রাখে। অন্তত ১৫ জন ডাক্তার ছিলেন। সাদা কাগজ দিয়ে বলেন, 'আপনি এর উপর সই করে দিন। যা দরকার আমরা লিখে নেব। আপনি এখন টেনশনে আছেন'। আমি বললাম, 'সাদা কাগজে সই করাচ্ছেন কেন'? আমাদের বাড়ি থেকে ১৮ জন লোক ছিল। তাদের কাউকে তো ডাকতে পারত! ডাকেনি। আমি সাদা কাগজটা ছিঁড়ে ফেলি।" (RG Kar Victim Family)


নির্যাতিতার কাকিমা জানিয়েছেন, পুলিশ এসে ঘিরে ধরে। বার বার করে প্রিন্সিপালের ঘরে যেতে বলা হয়। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, কোথাও যাবেন না। প্রিন্সিপালের প্রয়োজন পড়লে তিনি এসে কথা বলুন। কিন্তু পুলিশ একরকম হাইজ্যাক করে প্রিন্সিপালের ঘরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। নির্যাতিতার মা-বাবাকে পাঁচ মিনিটের জন্য বলে, তার পর যে নিয়ে যায় পুলিশ, আর দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। 


নির্যাতিতার কাকিমা বলেন, "পাঁচ মিনিটের জন্য বলে নিয়ে গেলেন, আর দেখতে পাইনি আমরা। মা-বাবা একদিকে, বাকি পরিবার অন্য দিকে। বলা হয়েছিল আমাদের জন্য দু'টি গাড়ি রয়েছে। আমি যখন গাড়িতে উঠতে যাই, দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। বলা হয়, ওই গাড়িতে পুলিশ ছাড়া আর কেউ উঠতে পারবে না আমরা অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। চোখের সামনে দিয়ে মেয়ের দেহ চলে যায়। দাদাকে ফোন করলাম, তাঁরা টালা থানায় বসে। খবর পেলাম, দেহ বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে। ২০ মিনিট দেহ রাখা হয়েছিল বলছে পুলিশ, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, মেয়ের দেহ বাড়ির সামনে দেড় ঘণ্টা ছিল। বাড়ির কেউ ছিলেন না, ওখানকার কাউন্সিলর ছিলেন। ওখানে পৌঁছলেও পুলিশ ঢুকতে দিচ্ছিল না। বলছিল, পরিবারে ক'জন লোক থাকে। তখন আমি কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি, একচু মানবিক হোন। ৩০০-৪০০ পুলিশ ছিল। দেহ দাহ হওয়ার পর আর একজনও ছিল না।" 


মেয়ের দেহ বাড়িতে আসার পর ডিসি নর্থ ঘরে ঢুকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন নির্যাতিতার বাবারও। ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বার বার মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। দেহ রেখে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা, কিন্তু চাপ দেয় পুলিশ। নির্যাতিতার বাবার দাবি, ৩০০-৪০০ পুলিশ টালা থানায় ঘিরে রেখেছিল, বাড়ির সামনে ৪০০ পুলিশ ব্যারিকেড করে রেখেছিল। তাই বাধ্য হন মেয়ের দেহ দাহ করতে। এর পর শ্মশানের খরচ কেন বিনামূল্যে করে দেওয়া হল, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ময়নাতদন্তে কেন দেরি হল, প্রশ্ন তুলেছেন।


এ নিয়ে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "আমি যখন পরিবারের কাছে গিয়েছিলাম, বেরিয়ে এসে এটাই বলেছিলাম পরিবারকে উদ্ধৃত করে। ওঁর বাবা-মা জানিয়েছিলেন, মেয়ের দেহ শায়িত থাকাকালীনই পাশের ঘরে পুলিশ টাকা দিতে চায়। আমি আর জি করেও যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, সেদিনও বলেছিলাম। এটা ভয়ঙ্কর অভিযোগ। আমরা বুঝতে পারছি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, তার পুলিশ বাহিনী, প্রথম দিন থেকে গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সরকার ধর্ষণের পক্ষে। সরকার গণতন্ত্র, মানুষের অধিকারকে ধর্ষণ করতে চাইছে। ধর্ষক এই সরকার। এতবড় অন্যায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সহ্য করতে পারে না।"


রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "এটা প্রাতিষ্ঠানিক খুন। মেয়েটি পুরুষ হলেও খুন হতে হতো। মহিলা বলে ধর্ষিতা হতে হয়েছে। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, তৃণমূলের নেতাদের তরফে। হাসপাতাল থেকে শ্মশান পর্যন্ত প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে।" তথ্য লোপাটের চেষ্টা হয়েছে বলে মত সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। তাঁর কথায়, "তথ্য লোপাটের এই চেষ্টা নজিরবিহীন। দেহ রয়েছে, তার মধ্যে টাকার রফা হচ্ছে। ডিসি সেন্ট্রাল রোজ মিথ্যে বলছেন।"