পার্থপ্রতিম ঘোষ এবং সুদীপ্ত আচার্য, কলকাতা: ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজো মণ্ডপ চত্বরে স্লোগান দিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন নয় জন। হাইকোর্টের কড়া নির্দেশের পর শনিবার ছাড়া পান সকলে। এবার এবিপি আনন্দে শোনালেন তাঁদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। তাঁদেরই মধ্যে একজন কুশল কর। রবিবার সন্ধেয় তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। 



শুধুমাত্র বিচার চেয়ে স্লোগান দেওয়ায় তিন-তিনটে রাত লকআপে থাকতে হয়েছে ৯ জনকে। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশ এবং তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ে শনিবার সকলকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। আর রবিবার তাঁদের কয়েকজনই এবিপি আনন্দে নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন।  স্লোগানকাণ্ডে জামিনে মুক্ত পড়ুয়া সুজয় মণ্ডল বলেন, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান দেওয়ার জন্য তিনদিন লকআপে থাকতে হবে, এটা ভাবিনি'। 


উল্লেখ্য, ৯ অক্টোবর, ষষ্ঠীর দিন 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগান দেওয়ায় ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজো মণ্ডপের সামনে থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই নয় জনের মধ্যে ছয়জনই পড়ুয়া। তাঁদেরই একজন আসানসোলের বাসিন্দা সুজয় মণ্ডল। সুজয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। 


বছর কুড়ির যুবকের দাবি, সমাজে একটা সচেতন বার্তা দেওয়ার জন্য তাঁরা ওই স্লোগান দিয়েছিলেন। সুজয় মণ্ডলের কথায়, 'আমরা অভয়া পরিক্রমার ডাকে গেছিলাম। সমাজে একটা সচেতন বার্তা দেওয়ার জন্য। তবে বাড়ির লোক চিন্তিত। একটা স্লোগান দেওয়ার জন্য এভাবে গ্রেফতার করা হবে বুঝতে পারিনি। এটা সবার আন্দোলন।' 


অন্যদিকে, ২৭ বছরের কুশল করের বাড়ি ট্যাংরায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী কুশল বর্তমানে টিউশন করে সংসার চালান। সেদিন ঠিক কী হয়েছিল, তা উঠে এসেছে এই যুবকের গলায়। তিনি বলেন, '৯ অগাস্টের ঘটনা আমাদের কাঁপিয়ে দেয়। প্রথমে আমরা ম্যাডক্সে গিয়ে স্লোগান দিই। এরপর প্ল্যান ছিল দেশপ্রিয় পার্কে যাব। পুলিশ প্রথমে এসে বলল বেরিয়ে যান। একজন আইপিএস ছিলেন। তিনি বললেন, আপনাদের জন্য পদপিষ্ট হয়ে যেতে পারে। তারপরে আমাদের টেনে হিঁচড়ে ভ্যানে তুলল। ৩ দিন লকআপে ছিলাম। এরকম দানবীয় মিথ্যা মামবলায় ফাঁসাবে ভাবতে পারিনি। কী করেছি, সেটাও আমাদের জানায়নি। ভয় পেয়েছি। কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে যাব না।' 



অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দার বাসিন্দা, ২০ বছরের দীপ্তমান ঘোষ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। বাকিদের সঙ্গে ষষ্ঠীর দিন তাঁকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। দীপ্তমানের কথায়, 'সবাই যাতে এটা ভুলে না যায়, তাইজন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা। পুলিশের ৩০-৩৫ জনের টিম জেরা করত। আমাদের কী প্ল্যান ছিল, আর কোথায় কোথায় যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো বারবার জানতে চাইছিল। কাউকে উত্যক্ত করিনি, তাও কেন তিনদিন এইভাবে লক আপে থাকতে হবে?' 


এছাড়াও এই ঘটনায় হাসনাবাদের বাসিন্দা তৃতীয় বর্ষের অনার্সের পড়ুয়া ঋতব্রত মল্লিক, বর্ধমানের বাসিন্দা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া নাদিম হাজারি, চাকরির খোঁজে থাকা আসানসোলের বাসিন্দা ও সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী আইসার রহমান, নাগের বাজার এলাকার বাসিন্দা উত্তরণ সাহা রায় এবং আগড়পাড়ার চন্দ্রচূড় চৌধুরী ও সোনারপুরের শিল্পী জহর সরকারকে একইসঙ্গে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে হাইকোর্টের কড়া নির্দেশে সকলেই এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। 


 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে