কলকাতা: আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ফের রাজপথ দখল। চিকিৎসক থেকে শিল্পী-মহাসমাবেশে পা মেলালেন প্রবীণরাও। দেবীপক্ষের সূচনাকালে রাত দখলেরও ডাক দেয় বিভিন্ন সংগঠন। ঢাকের আওয়াজ, গান, স্লোগান, পথনাটিকার মাধ্যমে শহরের নানান প্রান্তে রাত দখল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। 


মহালয়ার আগে রাজপথে জনজোয়ার। তবে এই ভিড় উৎসবের নয় দ্রোহের। সুবিচারের দাবিতে ফের গর্জে উঠলেন কাতারে কাতারে মানুষ। চিকিৎসকের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল রিকশা চালকও। দেবীপক্ষ শুরুর আগের দিন গানে-স্লোগানে মুখর প্রতিবাদের এই ছবি কখনও দেখেনি কলকাতা। মঙ্গলবার কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন, মহা মিছিল ও মহা সমাবেশের ডাক দিয়েছিল ৫৫ টি সংগঠন। বিকেল ৫ টা ১৫ নাগাদ। কলেজ স্কোয়ার থেকে এই মিছিল শুরু হয়। তারপর বৌবাজার, সেন্ট্রাল অ্যাভনিউ, ধর্মতলা, পার্কস্ট্রিট হয়ে মিছিল পৌঁছয় রবীন্দ্র সদনের সামনে মুক্ত মঞ্চে।


শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, কলেজ পড়ুয়া থেকে গৃহবধূ সকলেই দেবীপক্ষের সূচনাকালে আর জি কর মেডিক্যালের নিহত চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে সরব হন। মিছিলে হাঁটেন অনেক বয়স্ক চিকিৎসকও। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের চিকিৎসক ও সদস্য, তমোনাশ চৌধুরী, বলছেন, 'পুজোর কদিন শ্যামবাজার এবং সোদপুর অবস্থান ধর্না মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসবেন চিকিৎসকরা'। এই মিছিলে সংগঠনের ব্যানার থাকলেও ছিল না কোনও রাজনৈতিক পতাকা। তবে এদিনের মিছিলে যোগ দেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও। বিচারের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক রং ভুলে জাতীয় পতাকার পাশেই এক হয়ে হাঁটতে দেখা যায় তাঁদের। রবীন্দ্র সদনের মুক্ত মঞ্চে হাজির ছিলেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা ও অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা। 


'আমার মেয়ে, আমার স্বর/ গর্জে উঠুক, গ্রাম, নগর' একই দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয় হরিনাভি মোড়ে। সমাবেশে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে নিহত চিকিৎসকের প্রতীকি ছবি আঁকেন সনাতন দিন্দা। যত দিন না সুবিচার ও মিলছে তত দিন লড়াই জারি রাখার শপথ নেওয়া হয় সমাবেশে। দোষীদের শাস্তি ও সরকারি ক্ষেত্রে থ্রেট কালচার বন্ধের দাবিতে এদিন শিয়ালদা থেকে শ্যামবাজর পর্যন্ত মিছিল করে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চও। মিছিলে অংশ নেন কামদুনির প্রতিবাদী মুখ টুম্পা কয়াল। দেবীপক্ষের সূচনাকালে রাত দখলেরও ডাক দেয় বিভিন্ন সংগঠন। ঢাকের আওয়াজে, গান, স্লোগান, পথনাটিকার মাধ্যমে শহরের নানান প্রান্তে রাত দখল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। বহু জায়গায় প্রতিবাদে অংশ নেন তারকরাও।


যাদবপুর এইট বি, গড়িয়াহাট, রুবি মোড়, কলেজ স্কোয়ার, সিঁথি, নাগেরবাজার, এয়াপোর্ট ১ নম্বর গেট, হাডকো মোড় এই সমস্ত জায়গায় মহালয়ার আগের রাতে চলে প্রতিবাদ। প্রতিবাদের ছবি দেখা যায় জেলাতেও। বারাসাত, বনগাঁ, দুর্গাপুর, মহালয়ের দিনও মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ফের রাজপথ দখল। চিকিৎসক থেকে শিল্পী-মহাসমাবেশে পা মেলালেন প্রবীণরাও। দেবীপক্ষের সূচনাকালে রাত দখলেরও ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন সংগঠন। ঢাকের আওয়াজ, গান, স্লোগান, পথনাটিকার মাধ্যমে শহরের নানান প্রান্তে রাত দখল ও প্রতিবাদ সভা চলল প্রায় ভোররাত পর্যন্ত। স্লোগান উঠল, 'তিলোত্তমা যেদিন বিচার পাবে, সেদিন উৎসব হবে'।


অন্যদিকে, প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই বেহালায় অভয়ালয়া। রাস্তার ধারে মানববন্ধন প্রতিবাদীদের। সবার হাতে উড়ল জাতীয় পতাকা। পুজোয় আছি, উৎসবে নেই, একসুরে গর্জে উঠলেন প্রতিবাদীরা। পথে পথে বাজল শাঁখ। স্লোগানে স্লোগানে চলল পথে পথে প্রতিবাদ। মহিলারা এসেছিলেন সাদা-শাড়ি লাল পাড় পরে। পোশাকের রঙমিলান্তি যেন বুঝিয়ে দিল, সবাই এক পথে আছেন, একসঙ্গে আছেন। স্লোগান উঠল, 'উৎসব কবে হবে? আমার দুর্গা বিচার পেলে'। কেবল বেহালা নয়, শহরের একাধিক জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করেছিল বিভিন্ন সংস্থা। তবে কোনও সংস্থারই কোনও রাজনৈতিক রং ছিল না। সাধারণ মানুষেরাই সম্মিলিত হয়ে নেমেছিলেন পথে। প্রতিবাদ দেখা গেল গড়িয়াতেও।