অর্ণব মুখোপাধ্যায়, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, হুগলি :  বাংলো, বিলাসবহুল ধাবা, হোম স্টে, স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ED-র হাতে ধৃত, বলাগড়ের যুব তৃণমূল ( TMC ) নেতা ও হুগলি ( Hooghly )  জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ( Shantanu Banrerjee ) সম্পত্তি নিয়ে যত বলা যায়, ততই যেন কম হয়ে যায়। কিন্তু ধৃত নেতার সম্পত্তি নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখনই সামনে এল চাঞ্চল্যকর আরও একটি বিষয়। হুগলির পুরশুড়ার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি,সেখানকার বালি খাদানগুলিও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন শান্তনু!!


এমনকি বেনামে তাঁরও বালি খাদান রয়েছে বলে অভিযোগ। পুরশুড়ার পঞ্চাননতলা ও মারকুণ্ডা ঘাটের কাছেই , বেশ কয়েকটি বালি খাদান। অভিযোগ, এই সমস্ত খাদান থেকে কারা কতটা বালি তুলতে পারবে, তা নিয়ন্ত্রণ করার রিমোট থাকত শান্তনুর হাতেই!


কত টাকার বিড করবে, তাও ঠিক করে দিতেন শান্তনু


শুধু তাই নয়, খাদান লিজ পেতে কারা কারা কত টাকার বিড করবে, তাও ঠিক করে দিতেন শান্তনু। 
ফলে খাদান লিজে পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা থাকত না। অনেক কম টাকায় খাদান লিজ পেয়ে যেতেন আবেদনকারীরা। 
এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্য সরকারের কোষাগার।


খুন হয়ে যাওয়ার ভয়ে বলতাম না : স্থানীয় বাসিন্দা


পুরশুড়ার এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, 'আমার জমির উপর বালি রাখা হত, টাকা দেবে বলেছিল কিন্তু কোনও টাকা দেয়নি, ভয় দেখানো হত, বালি খাদানের সঙ্গে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সরাসরি যুক্ত ছিলেন না, একটি সংস্থার নামে খাদান নেওয়া হয়েছিল। খুন হয়ে যাওয়ার ভয়ে বলতাম না। একসঙ্গে বসে টেন্ডার ঠিক করে দিত।' 


এখানেই শেষ নয়, পূর্ব বর্ধমান লাগোয়া এলাকা হওয়ায়, জামালপুরে বালি তোলার অনুমতি নিয়ে, হুগলির খাদান থেকেও বালি তোলা হত বলে অভিযোগ। বালি খাদানের মালিক শ্যামসুন্দর মণ্ডল দাবি করছেন, আমার খাদানের সঙ্গে শান্তনুর যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু মেহেদিপুরে ছিল জানি, ও একটা লোকের সঙ্গে খাদান চালাত।


 খাদান করলে তৃণমূল ছাড়ুন : মমতা


বালি চুরি ঠেকাতে বারবার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের তরফে সতর্ক করে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। খাদান করলে তৃণমূল ছাড়ুন, স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন নেত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরাসরি বলে দিয়েছিলেন, ' হয় ঠিকাদারি করো, না হলে তৃণমূল করো। দু’টো একসঙ্গে হবে না। যদি ঠিকাদারি করতে চাও, কোনও আপত্তি নেই। যদি তৃণমূল করতে চাও, এই ঝান্ডাটা যেদিন নেবে, ঠিকাদারির বোঝাটা বাড়িতে ফেলে রাখতে হবে।' 


বালি চুরি ঠেকাতে ইতিমধ্যেই ‘স্যান্ড মাইনিং পলিসি’ এনেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তারপরও কীভাবে বালি খাদান নিয়ন্ত্রণে রাখতেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়? দলের কেউ কিছুই জানত না? 


শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কোথায় কোথায় গেছে, তা খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
কিন্তু বালি কারবারের সঙ্গে আর কোন মাথা জড়িয়ে আছে? সেই টাকার ভাগ কারা কারা পেত? সেই প্রশ্নগুলিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।