শিলিগুড়ি: বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়েও খানিকটা হলেও মন ভার ছিল শিলিগুড়ি (Siliguri Municipal Election 2022) নিয়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৌরসভা নির্বাচনে একের পর এক ওয়ার্ড থেকে যেমন জয়ের খবর উঠে আসছে, তার সঙ্গেই সেই বিষণ্ণ ভাব কাটিয়ে উঠছে তৃণমূল (TMC)। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কথাতেও সেই খুশির রেশই ধরা পড়ল। এটা মানুষের রায় বলে মন্তব্য করলেন তিনি। 


সোমবার সকালে ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর বেলা ১২ টা পর্যন্ত শিলিগুড়ির ৪৭টি আসনের মধ্যে ৩৭টিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। গৌতম দেব-সহ একাধিক ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেউ বিজয়ী ঘোষিত হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। ঘটনাচক্রে এ দিনই আবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মমতা। তার আগে জয়ের খবর নিয়ে যেতে পারায় খুশি হয়েছেন বলে জানালেন মমতা। একই সঙ্গে গৌতম দেবকেই সেখানকার বহু মেয়র ঘোষণা করলেন তিনি। বলেন, ‘‘ও ওখানে সবার থেকে সিনিয়র। ও-ই মেয়র হবে।’’


এ দিন এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মমতা বলেন, ‘‘আমি, আমার দল মানুষের কাছে ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ। সকলকে আমাদের প্রণাম, সেলাম ধন্যবাদ, নমস্কার জানাই। অনেক সময় ছোট্ট ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার করা হয়। এ বার কোনও রকম গন্ডগোল হয়নি। শান্তিপূর্ণ ভাবে মানুষ রায় দিয়েছেন। আমি নিজে বার বার নির্দেশ দিয়েছি। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী প্রশাসন কাজ করেছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয়েছে। সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এই জয় আমাদের আরও বেশি নম্র, মানবিক হতে, সবুজায়ন করতে, কর্মসৃষ্টি করতে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে, কোভিড সচেতনতা আনতে, বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করুক।’’ প্ররোচনায় পা না দিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ ভাবে জয় পালন করতে অনুরোধ জানান মমতা।


বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে ৩৬ আসনে এগিয়েছিল বিজেপি, এ বার দুই অঙ্কের আসনেও এগিয়ে নেই তারা। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের বহু আসনে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু জিতেও মানুষের জন্য কিছু করেনি। কথা ছিল, চা বাগান খুলে দেবে। আজও হয়নি তা। দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর, কোথাও কিছু করেনি ওরা।’’


তৃণমূলের হাতেই উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ঘটেছে বলে জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির সঙ্গে ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। শিলিগুড়ি বিমানবন্দরে রাতের বেলা বিমানের অবতরণ থেকে শুরু করে সেটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। বড় বড় রাস্তা, উড়ালপুল, ভোরের আলো প্রক্লপ, তিস্তা টাউন, কোচবিহার হেরিটেজ টাউন, প্রচুর পদক্ষেপ করেছি আমরা।’’


আরও পড়ুন: Bidhannagar Municipal Poll Result 2022: 'এই জয়ের কারিগর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়', জিতে প্রতিক্রিয়া সব্যসাচী দত্তের


দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শিলিগুড়ি বামেদের হাতে ছিল। পরবর্তী কালে সেখানে নিজেদের ভিত মজবুত করতে সক্ষম হয় বিজেপি। কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনে সবু ঝড়ের সামনে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিরোধী পক্ষের সব দল। মমতার কথায়, ‘‘বিজেপি কখনও সিপিএম-কে ভোট দিয়ে দেয়, আবার সিপিএম কখনও বিজেপিকে। বিজেপি কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে দেয়, কংগ্রেস আবার বিজেপি-কে। জগাই-মাধাই-গদাইয়ের মধ্যে ভোটের বোঝাপড়া রয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম এবং কংগ্রেস বিজেপি-কে ভোট দিয়ে দিয়েছিল। লোকসভাতেও তাই। এখন নিজেদের সামলাতে পারছে না।’’


শিলিগুড়িতে সবুজ আবির উড়তে দেখে মতার একটাই বক্তব্য, ‘‘কাউেক না কাউকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ হতেই হবে। কারও না কারও জামানত বাজেয়াপ্ত হবেই। আমি আমাদেরটা নিয়েই থাকতে চাই। সিপিএম ওখানে কিছু করেনি। মানুষকে উস্কে দেওয়া, বিজেপি-র মতো প্ররোচনা দেওয়ার কাজ করেছে। মানুষের জন্য কোনও কাজ করেনি। তিরিশ বছর তা দেখেছেন মানুষ। শুধু নেতিবাচক রাজনীতি করে গিয়েছে।’’


এ বারে শিলিগুড়িতে পরাজিত হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। নিজে প্রার্থী হতে না চাইলেও, দলের অনুরোধ ফেলতে না পেরে পৌর নির্বাচনে নাম লেখান অশোকবাবু। তা নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করেন গৌতম দেব। কোথাও গিয়ে থামতে হয় বলে মন্তব্য করেন। মমতা যদিও অশোকবাবুর সমালোচনায় যাননি। বরং জানিয়েছেন, অশোকবাবু হেরে গিয়েছেন বলে নয়, যে কোনও অবস্থায় সাহায্য চাইলে তিনি এগিয়ে যাবেন। এমনকি অশোকবাবুর স্ত্রী যখন অসুস্থ ছিলেন, নিজে থেকেই ফোন করেছিলেন বলে জানান মমতা।


মমতা আরও জানিয়েছেন, সারা ভারতে বেকারত্ব বাড়লেও, বাংলায় কর্মসংস্থান বাড়িয়েছে তাঁর সরকার। জেলায় জেলায় আগামী দিনে শিল্প গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য তাঁর।