ঝিলম  করঞ্জাই, কলকাতা :  প্রতি বছর বর্ষার মুখ থেকে শীত ( Winter ) । ত্রাস সৃষ্টি করে ডেঙ্গি ( Dengue ) । ভয় ধরায় মৃত্যুর শঙ্কা। অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন রোগীরা। কখন যে রোগীর অবস্থার অবনতি হবে, অনেকসময়ই অনুমান করা যায় না। ডেঙ্গির তাই উৎকণ্ঠার কারণ। বছর বছর ভয়াবহভাবে হানা দেয় ডেঙ্গি। আর এই অসুখের এখনও কোনও ভ্যাকসিন নেই। তবে এবার ডেঙ্গি চিকিৎসায় দারুণ সুবিধে নিয়ে আসছে একটি রক্তপরীক্ষা।  দেখা গিয়েছে আশার আলো। এবার থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে দৈনন্দিন রক্ত পরীক্ষাই জানিয়ে দেবে রোগীর শরীরের উন্নতি-অবনতির ফারাক।


আইআইটি বম্বে-র ( IIT Bombay ) সহযোগিতায় ডেঙ্গি পরীক্ষার অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসক অরুণাংশ তালুকদার। তাঁর দাবি, দৈনিক ভিত্তিতে বায়ো-মার্কার টেস্টই বলে দেবে ডেঙ্গি আক্রান্তের পক্ষে প্রতিদিন সংক্রমণ কতটা বিপজ্জনক হতে যাচ্ছে বা শারীরিক অবস্থার কতটা উন্নতি হচ্ছে। কলকাতার ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে আইআইটি বম্বে-র বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগিতায় শুরু হয়েছিল গবেষণা। ২ বছর আগে ডেঙ্গি -পরীক্ষার এই নতুন আবিষ্কার হয়। ২০১৯-এ আবেদন করে, দিনকয়েক আগে মিলেছে পেটেন্ট। 


এবছরও বাংলায় ভয়াবহ হয়েছিল ডেঙ্গি। ডিসেম্বরের শুরুতেই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়ায় ১ লক্ষের গণ্ডি। সংক্রমণের নিরিখে সর্বাধিক ডেঙ্গি আক্রান্ত ছিল উত্তর ২৪ পরগনা। দ্বিতীয় স্থানে কলকাতা। আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় মুর্শিদাবাদ। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। 


গত ১২ বছরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তা সরকারি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট! হিসাব বলছে,২০১২ সালে রাজ্যে মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬ হাজার ৪৫৬ জন। এরপর ২০১৬-তে ২২ হাজার ৮৬৫, ২০১৭-তে ৩৭ হাজার ৭৪৬, ২০১৮ সালে প্রায় ২০ হাজার, ২০১৯-এ ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হন ডেঙ্গিতে। মাঝের ২ বছর মোট ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এতটা না বাড়লেও,  ২০২২-এ তা একলাফে গিয়ে দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ২৭১-এ। আর চলতি বছর শেষের আগেই বাংলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ পার! স্বাভাবিক ভাবেই মশাবাহিত এই রোগের থেকে নিস্তারের পথ পাচ্ছে না বঙ্গবাসী। ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে এর রূপ ও পরিণতি। তাই এই মুহূর্তে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক অরুণাংশ তালুকদারের এই উদ্ভাবন ডেঙ্গি-চিকিৎসায় নতুন দিশা দেবে।