দীপক ঘোষ, সুদীপ্ত আচার্য ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় : মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে অনুপ্রবেশের ঘটনায় আগেই পুলিশের ভূমিকা (Role of Police) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার আদালতে সিটের (SIT) তরফে যে যে বিস্ফোরক তথ্য পেশ করা হল, তাতে সেই প্রশ্নগুলোই আরও জোরাল হল। আর এনিয়ে অব্যাহত রয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।


Z+ সিকিওরিটিতে এত বড় ফাঁক কী করে ?


পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি চত্বরে ৭ ঘণ্টা লুকিয়ে থাকাই নয়, তার আগে ৭ থেকে ৮ বার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির এলাকায় গেছিল হাফিজুল। তুলেছিল ছবি। দোল উৎসব থেকে রথ, অংশ নিয়েছিল নানা অনুষ্ঠানে। রীতিমতো রেকি করে ঢুকেছিল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। এই নিয়ে একাধিক সাক্ষীর বয়ান সংগ্রহ করেছে পুলিশ। কিন্তু, অভিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকল কী করে ? Z+ সিকিওরিটিতে এত বড় ফাঁক কী করে সম্ভব ? এই প্রশ্ন বারবার উঠছে।


২ জুলাই রাতে, মুখ্যমন্ত্রীর দাদার ঘরের পাশ দিয়ে পাঁচিল ও গার্ডরেল টপকে বাড়ির চত্বরে ঢুকে পড়েছিলেন হাসনাবাদের হাফিজুল মোল্লা। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কনফারেন্স রুমের পিছনে লুকিয়ে ছিলেন। সকালে এক সাফাই কর্মী তাকে দেখতে পান। তিনিই পুলিশে খবর দেন। পুলিশকে দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে অভিযুক্ত। কিন্তু, তাঁকে ধরে ফেলে পুলিশ।


আরও পড়ুন ; ৭ থেকে ৮ বার রেকি করেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে প্রবেশ ধৃত হাফিজুলের, তদন্তে নয়া তথ্য


এরপর গতকাল আদালতে হাফিজুল সম্পর্কে একের পর এক চাঞ্চল্যকর দাবি করে SIT। তারা জানিয়েছে, মোবাইলে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশপাশ ও যাতায়াতের পথের ছবি মিলেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে ভাব জমিয়ে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছিল হাফিজুল। দোলের দিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি এলাকায় এসেছিলেন তিনি। স্থানীয়দের সঙ্গে দোল খেলেছিলেন। রথের দিনও হাফিজুল হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এসেছিলেন। রথের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছিলেন হাফিজুল। এরকম একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আদালতে জমা দিয়েছে সিট। তদন্তকারীদের আরও দাবি, ধৃতের মোবাইলে ১১টি সিমকার্ড ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্গাপুজোর আগে অভিযুক্ত অবৈধভাবে বাংলাদেশে গেছিল। এছাড়া গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, বিহার, মুম্বইতে নিয়মিত ফোন করতেন হাফিজুল। এনিয়ে অভিষুক্তের আইনজীবী বিকাশ গুছাইত বলেন, হাফিজুল নিজে স্বাকীর করেছে যে বাংলাদেশ গেছিলাম। দুর্গাপুজোর সময় নৌকায় করে বাংলাদেশ গেছিল। মোবাইলে যা পাওয়া গেছে তাতে ঝাড়খণ্ড ও বিহারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। 


এনিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, মারাত্মক ঘটনা, পুলিশ কী ঘুমোচ্ছিল? মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা দিতে পারে না। রাজ্যের মানুষকে নিরাপত্তা দেবে?


রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, দায় কার রাজ্য সরকারের পুলিশের, পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে পারে না। সাধারণ মানুষকে কী দেবে?


তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, উদ্বেগজনক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টা নজর যেন দেওয়া হয়।


ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা অধিকর্তার পদ থেকে IPS অফিসার বিবেক সহায়কে সরিয়ে, একদা এসপিজিতে কর্মরত পীযূষ পাণ্ডেকে আনা হয়েছে।