সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: স্কুল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল গোটা রাজ্য। সেই আবহে এ বার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গ্রেফতার হলেন SSC-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্‌হা এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক সাহা। তদন্তে নেমে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের অনুসন্ধান কমিটি। তাতে দু’জনের বিরুদ্ধেই মারাত্মক অভিযোগ তোলা হয়। 


দুই প্রাক্তন কর্তাকেই গ্রেফতার করল সিবিআই, তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ


কলকাতা হাইকোর্টে জমা পডা় ওই রিপোর্টে শান্তিপ্রসাদ এবং অশোককুমারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলা হয়। গ্রুপ ডি এবং গ্রুপ সি নিয়োগে দু’জনের ভূমিকার কথা উঠে আসে। তাতে অভিযোগ করা হয় যে, প্যানেলে প্রকাশের আগে পুনর্মূল্যায়ন করে ক্রমসংখ্যা পাল্টাতেন তাঁরা। অর্থাৎ কোনও পরীক্ষার্থীর নাম হয়ত মেধাতালিকায় ১০ নম্বরে ছিল। সেই নাম তুলে এনে তিন বা চার নম্বরে বসিয়ে দিতেন। হাইকোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে তার উদাহরণও তুলে ধরা হয়। 


আরও পড়ুন: SSC Scam: নিয়োগে-দুর্নীতি মামলায় এবার গ্রেফতার এসএসসির ২ প্রাক্তন উপদেষ্টা


ক্রমসংখ্যা পরিবর্তনে শান্তিপ্রসাদ এবং অশোককুমার সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করা হয় ওই রিপোর্টে। জানানো হয়, নিজের সুপারিশপত্র হাতে করে নিয়ে গিয়ে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে দিতেন শান্তিপ্রসাদ। সেই অনুযায়ী নিজের চেম্বারে সচিবকে দিয়ে নিয়োগপত্র বানাতেন কল্যাণময়। তার প্রিন্ট বার করে শান্তিপ্রসাদকে দিতেন। তিনি এসএসসি-র অন্য ভবনে গিয়ে সেই সময়স্ত চাকরিপ্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিতেন, যাঁরা আসলে নিয়োগপত্র পাওয়ার যোগ্যই নন। 


শুধু তাই নয়, প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ৩০০-র বেশি সুপারিশপত্র ছাপানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। দু’জনে কী অপরাধ করেছেন, তাঁদের কী শাস্তি হওয়া উচিত তারও সুপারিশ ছিল ওই রিপোর্টে। অনুসন্ধান কমিটি জানায়, এই অপরাধের জন্য দু’জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০-বি ধারায় ষড়যন্ত্রের এফআইআর দায়ের হওয়া উচিত। তাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি দিতেন এবং গোটা ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলেও অভিযোগ করা হয়। 


ঠিক কী কী অভিযোগ দু’জনের বিরুদ্ধে, কোর্টে তার রিপোর্ট জমা পড়েছে


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তার পর সিবিআই-এর দায়ের করা এফআইআর-এ একেবারে প্রথমেই নাম ছিল শান্তিপ্রসাদের। চার নম্বরে নাম ছিল অশোককুমারের। সিবিআই তল্লাশিতে তাঁদের দু’জনের নামে একাধিক জায়গায় আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বলে অভিযোগ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। দু’জনের ফ্ল্যাট এবং বাড়িতেও তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা।  তাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়। 


তার পর বুধবার সকাল থেকে দু’জনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিবিআই। গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, বার বার জিজ্ঞাসা করেও এ দিন বেশ কিছু প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি তাঁদের কাছ থেকে। অনেক তথ্য গোপন করছিলেন তাঁরা। তাঁদের বয়ানেও অসঙ্গতি ধরা পডে়। তদন্তকে এককথায় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। তাতেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। 


এই মামলায় আগেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অনুমোদনেই এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু তদন্তকারীদের পার্থ জানান, তিনি শুধু কমিটি গঠনের জন্য স্বাক্ষর করেছিলেন। বাকি কিছু জানা নেই তাঁর।