আবির দত্ত, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : ২০১৬ সালের বিধানসভা ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর বেহালার বাড়িতে তৈরি হয় তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয়। এমনটাই দাবি কালীঘাটের কাকুর পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র বিরুদ্ধে বুথ দখল করে ভোট করানোর অভিযোগেও সরব হয়েছেন কলকাতা পুরসভার ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর।
ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর দাদা অজয়কৃষ্ণ ভদ্র জানিয়েছিলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওখানে চাকরি করতেন। দু'-একবার অভিষেক ওর বাড়িতে এসেছিলেন। আগে আরএসএস করত, তারপর তৃণমূল করত।
তৃণমূলের অন্দরে কি অত্য়ন্ত সক্রিয় ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ? তাঁর প্রভাব কি মারাত্মক ছিল ? সেই জন্যই কি রকেট গতিতে উত্থান 'কালীঘাটের কাকুর' ? নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের পাড়ার বাসিন্দাদের দাবিতে জোরালো হল এই প্রশ্নই।
২০১১ সালে ভবানীপুর বিধানসভা উপ-নির্বাচনে খোদ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের বিপক্ষে যিনি নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সেই তাঁর বাড়িতেই ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় তৃণমূলের নির্বাচনী কার্যালয় খোলা হয়।
তার মানে কি শাসক দলের সুবিধা করে দিতেই কি ভবানীপুরে নির্দল প্রার্থী হন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ? এহেন সুজয়কৃষ্ণই মুখ খুললে কি কোনও প্রভাবশালীর নাম উঠে আসতে পারে ? কালীঘাটের কাকুর বিরুদ্ধে বুথ দখল করে ভোট করানোর অভিযোগেও সরব হয়েছেন কলকাতা পুরসভার ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর রত্না দে মজুমদার। তিনি বলেন, "ক'টা বুথে কায়দা করে ভোটে ছাপ্পা হয়েছে। মস্তানবাহিনী-অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাপ্পা ভোট মেরেছে।"
যদিও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলছেন, "বিভিন্ন দলে বিভিন্ন লোক থাকেন। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে কোথায় কী করছেন তার দায় তো সবটা দলের ঘাড়ে আসতে পারে না। আসা সম্ভবও নয়।"
যদিও ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ সরকারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এবিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।
সূত্রের খবর, এদিন, কাকুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ২ আধিকারিক। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি মানিক ভট্টাচার্যকে চেনেন কিনা। উত্তরে কাকু বলেন, ২০২১-এর আগে চিনতাম না। এরপরের থেকে চিনি। তখন, মোবাইলের একটি চ্য়াট হিস্ট্রি দেখানো হয় কাকুকে।
ED সূত্রে খবর, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮য় ২ জনের কথা হয়েছে। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরেও কাকু বলেন, কিছু বলব না। সূত্রের খবর, বুধবার ইডি দফতরে দেড় ঘণ্টা ধরে টানা কাঁদেন কাকু। বারবার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার সামাজিক সম্মানহানি হল। হাজার হাজার লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত। আর কেউ আসবে না। এরপর আধিকারিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আর ১টা দিন কেন সময় দিলেন না? তখন ই়ডি আধিকারিকরা বলেন, আপনাকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। তথ্য় চাওয়া হয়েছে। নথি পেশ করতে বলা হয়েছে। আপনি করেননি।
ED সূত্রে খবর, রাতে, সুজয়কৃষ্ণর সঙ্গে দেখা করতে আসেন তাঁর মেয়ে। বাবাকে তিনি বলেন, টিভিতে কীসব দেখছি? খাওয়া-দাওয়া করছ না কেন?
সূত্রের খবর, এরপর রাতে রুটি, তরকারি ও দই খান কাকু। সকালে খান চা ও পাউরুটি। দুপুরেও খাবার খেয়েছেন তিনি।