রাজীব চৌধুরী, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী: ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মারাত্মক অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari)। তাঁর দাবি, ৫০ লক্ষ টাকা এবং একটি স্করপিও গাড়ি দিয়ে কেনা হয়েছিল মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের তৎকালীন সিপিএম (CPM) বিধায়ক কানাই মণ্ডলকে (Kanai Mondal)। মমতার নির্দেশে বিধায়ক কিনেছিলেন বলেদাবি করলেন শুভেন্দু। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূল বিধায়ক কানাই।


মঙ্গলবার একটি সভায় কানাইকে কেনা হয়েছিল হলে শোরগোল ফেলে দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, "কানাই মণ্ডলকে বলব, আপনি আমার কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। আর এনায়েতের কাছ থেকে একটা স্করপিও গাড়ি।"  কিন্তু শুভেন্দুর বক্তব্যের পাল্টা কানাই বলেন, "তিনি যদি টাকা দিয়ে থাকেন, তাঁকে প্রমাণ করতে হবে। এ সমস্ত মিথ্যাচারের জবাব দিতে হবে তাঁকে।"


আজ এ দল...তো কাল ও দল...বিধায়ক কেনবেচার সংস্কৃতি বঙ্গবাসী প্রায় এক দশক হল দেখে চলেছে। কিন্তু এর নেপথ্য়ে গোপন লেনদেনের এমন খোলামেলা স্বীকারোক্তি-হুঁশিয়ারি কিংবা চ্য়ালেঞ্জ, এর আগে কখনও দেখা যায়নি। রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, টাকা মাটি, মাটি টাকা! আর এখানে নাকি
৫০ লক্ষ টাকা প্লাস স্করপিও গাড়ি মানেই বিধায়কের দলবদল!


আর জোর গলায় কেনার কথা যে সে কেউ নন বলছেন খোদ শুভেন্দু। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় তৃণমূলের দাপুটে নেতা ছিলেন। আর বিক্রি হওয়ায় অভিযুক্ত একদা সিপিএম বিধায়ক, পরে শুভেন্দুর হাত ধরে তৃণমূলে যোগদানকারী কানাই। বর্তমানে তিনি মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক এবং তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্য়ান।


এ নিয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম টেনেছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিল, কিনে আন এমএলএ। আমি কিনে এনেছিলাম। বি কুল কানাইবাবু। ধমক ধামক দেবেন না। জমানা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।"


এর পাল্টা শুভেন্দুর বিজেপি-তে যাওয়ার নেপথ্য চুক্তির কথা জানতে চান কানাই। তিনি বলেন, "আজ তিনি বিজেপি-তে যুক্ত হয়েছেন, কেন হয়েছেন, কত টাকার বিনিময়ে হয়েছেন, এটা তিনি বলতে পারবেন। অনেক বিধায়ককে নাকি তিনি দলে নিয়ে এসেছেন, তৃণমূল দলে, তাহলে এই টাকা উনি কোথা থেকে পাচ্ছেন? কোন তোলাবাজের থেকে টাকা পাচ্ছেন? একি নারদ কাণ্ডের টাকা? সারদা কাণ্ডের টাকা? তোলাবাজ যদি কেউ থাকে, গরুচোরের তোলাবাজ, কয়লাবাজির তোলাবাজ তাহলে তিনি হচ্ছেন একমাত্র শুভেন্দু অধিকারী। তোলাবাজের লাটসাহেব হচ্ছে উনি।"

শুভেন্দু অধিকারী যখন তৃণমূলের হয়ে মুর্শিদাবাদ দেখতেন, তখন সেখানে দেদারে কংগ্রেস-সিপিএমে ভাঙান ধরানো হত! এখন সেই শুভেন্দু
অধিকারী বিজেপিতে। তাই তিনি হাটে হাঁড়ি ভাঙার চেষ্টা করছেন! আর পাল্টা তৃণমূল প্রশ্ন তুলছে! আর আখেরে এই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের জেরে রাজনীতির চেহারাটা আরও বিকৃত হচ্ছ।

রাজনীতির বিকিকিনির এই হালচাল দেখে অনেকেরই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর উলঙ্গ রাজা কবিতার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে! কিন্তু, প্রশ্নটা হল, এখানে কে কাকে বলবে, রাজা তোর কাপড় কোথায়? কার সেই নৈতিক জোর আছে?