ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: বিংশ শতাব্দীর বাঙালি কথাসাহিত্যিক তিনি। উপন্যাস-ছোট গল্প- নাটক- প্রবন্ধ- সব ক্ষেত্রেই তাঁর অবাধ বিচরণ। সেই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১২৫তম জন্ম শতবার্ষিকী। মঙ্গলবার শতবার্ষিকী উদযাপন হয় জন্মভূমি বীরভূমের লাভপুরে। ১৩০৫ সালে ৮ই শ্রাবণ লাভপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করে ছিলেন। এদিন সকালে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে লোক শিল্পীদের নিয়ে প্রভাত ফেরির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সূচনা হয়। এর পর লাভপুরে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকখানা ধাত্রীদেবতাতে সরকারী ভাবে শুরু হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান।


এদিকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের আক্ষেপ, তাঁর জন্মভিটে সরকার হেরিটেজ ঘোষণা করলেও এখনো সেভাবে কোন সংস্কারের কাজ করা হয়নি। দ্রুত না করলে সব ধংস হয়ে যাবে। তার লেখা বিভিন্ন উপন্যাস, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, ধাত্রী দেবতা সহ বিভিন্ন গ্রন্থ লিখে তিনি, নানান পুরস্কারের সম্মানিত হয়েছিলেন। 


একই ভাবে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ,রবীন্দ্র পুরস্কার সহ  বিভিন্ন বিভিন্ন পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। মঙ্গলবার,  ১২৫ তম জন্মশতবর্ষে   তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের পক্ষে আক্ষেপ, তার  জন্মভিটে সরকার হেরিটেজ ঘোষণা করলেও  এখনো সেভাবে কোন সংস্কারের কাজ করা হয়নি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অবিলম্বে এই সংস্কারের কাজ শুরু না করা হলে, এই বসত বাড়িটি বা জন্মভিটে ধ্বংস হয়ে যাবে।



বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৬ সালে লাভপুরের যাদবলাল এইচই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতায় আসেন এবং প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ও পরে সাউথ সাবআর্বান কলেজে (অধুনা আশুতোষ কলেজ) ভর্তি হন। কিন্তু ভগ্নস্বাস্থ্য ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে তিনি লেখাপড়া সম্পূর্ণ করতে পারেননি।


রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগদান করে তারাশঙ্কর গ্রেফতার হয়েছিলেন; সেই বছর ডিসেম্বর মাসে কারাগার থেকে মুক্তিলাভও করেন। ১৯৩২ সালে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয় তার। সেই বছরই প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস চৈতালী ঘূর্ণি।


আরও পড়ুন, অঞ্জু এখন ফতিমা! পাকিস্তানে গিয়ে ধর্ম বদল করে পাক যুবককে বিয়ে ভারতীয় মহিলার


তিনি ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি ছোটোগল্প-সংকলন, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধ-সংকলন, ৪টি স্মৃতিকথা, ২টি ভ্রমণকাহিনি, একটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি প্রহসন রচনা করেন। তার উপন্যাস ও ছোটোগল্প অবলম্বনে বাংলা ভাষায় একাধিক জনপ্রিয় ও সমালোচকেদের দ্বারা প্রশংসিত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত জলসাঘর ও অভিযান, অজয় কর পরিচালিত সপ্তপদী, তরুণ মজুমদার পরিচালিত গণদেবতা, তপন সিংহ পরিচালিত হাঁসুলী বাঁকের উপকথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।