কলকাতা : ধর্মতলার মহা সমাবেশ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বিচারের দাবিতে প্রয়োজনে দিল্লিও যাবেন তাঁরা, হুঁশিয়ারি এসেছে প্রতিবাদীদের তরফে। নির্যাতিতার খুন - ধর্ষণের ঘটনার শিকড় অবধি পোঁছনোর দায়িত্ব এখন সিবিআইয়ের। তাই প্রয়োজনে 'দিল্লি চলো', জানালেন জুনিয়র ডাক্তাররা। একযোগে তাঁরা নিশানা করেছেন রাজ্য সরকার ও সিবিআইকে। তাহলে কি পুজোর মধ্যেও কি লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন জুনিয়র ডাক্তাররা? এই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতেই সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তাররা বৃহস্পতিবার বসবেন বৈঠকে। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দফায় জুনিয়র চিকিৎসকদের পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতিতে সম্পূর্ণ সায় থাকলেও এবার তাঁদের ফের কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশিষ্টদের একাংশ। 


এই অংশের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক কুণাল সরকার,  বিপ্লব চন্দ্র, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকারের মতো বিশিষ্ট জন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ে কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে আন্দোলন জারি রাখলেও কাজে ফেরার পরামর্শ দিলেন বিশিষ্টদের অনেকে। তারই মধ্যে একজন মোনালিসা মাইতি। হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। আরজি কর কাণ্ডের পর ছাত্রীদের উদ্দেশে তাঁর উদ্দীপক বার্তা নেটদুনিয়ায় জনপ্রিয়তা পায়। 


শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতি বলেন, '৯ অগাস্ট এই ঘটনার পরে আপামোর বাঙালি, আমি এই ঘটনার মধ্যে কোনও বিভেদ দেখি না, নারী পুরুষ দেখি না, হিন্দু মুসলমান দেখি না, ধনী দরিদ্র দেখি না। তারা বেরিয়ে পড়েছিলেন। .... কিন্তু বেরনোর পর কী হল ? এখনও পর্যন্ত আমরা অনেক কিছু পাইনি। প্রায় কিছুই পাইনি। আবার যেটুকু পেয়েছি, সেটাও কিছু কম নয়। ...আমি আমার সময়ে আমার পূর্ববর্তী রাষ্ট্রশক্তিকে দেখেছি, তাদের শেষের সময়টা দেখেছি। সেটাও যে খুব কুসুমাস্তীর্ণ ছিল তা নয়। তবে তাদের উপরে একটা শিক্ষিত সমাজের নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাই মাথার উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। কিন্তু এখন নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মাফিয়াবাদ, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বৃত্তদের হাতে। তাই আমাদের বেরিয়ে পড়তে হল। '


তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে শিক্ষাদুর্নীতির প্রসঙ্গে। কীভাবে সাদা খাতা জমা দিয়ে অনেকে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন , সেই কথা। পার্ক স্ট্রিট , কামদুনি, হাথরস, উন্নাওয়ের কথা টেনে তিনি দেশ ও রাজ্যের শাসন ব্যবস্থাকে যুগপৎ আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে গলা ছাড়ার প্রয়োজন ছিল। আন্দোলনের গভীরতা তার সাফল্য বা ব্যর্থতা ঠিক করে না। তিনি আরও বলেন, 'স্কুলে সরকারের তরফে স্টাম্প মেরে যে পাঠ্য বই পাঠনো হয় তা 'অযোগ্য'। এর থেকে আরও অনেক ভাল ও যোগ্য বই আছে। কিন্তু শাসক চায় , তুমি মূর্খ হয়ে থাকো ... তুমি শুধু ভোটটা দেবে ভোটের পরিবর্তে কোনও গর্জন - তর্জন চলবে না। '


তিনি আরও বলেন, 'যে তিলোত্তমা আমাদের জাগিয়ে দিয়ে গেছে, সেই জাগরণ যেন কখনও ঘুমে না পরিণত হয়। কিন্তু আমার একটা অনুরোধও রইল। কেউ আমরা তাঁকে ধর্ষিতা বলি, কেউ নির্যাতিতা বলি, কেউ তিলোত্তমা বলি। কিন্তু কোনও লাশ এত বড় আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে না। তাই তাঁকে বিদ্রোহী বলুন, শহিদ বলুন ... আমরা এখনও তাঁর হাত ধরেই হাঁটছি। ' 


তিনি অনুরোধ রাখেন, আমাদের দেশে অনেক মানুষই বস্ত্র পান না। খেতে পান না। সেখানে দাঁড়িয়ে সরকারি হাসপাতালের সুযোগ সুবিধা থেকে তাঁরা যদি বঞ্চিত হন, তাহলে কিন্তু এই আন্দোলন মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, সাধারণ মানুষের থেকে অন্তত। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তিনি আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের বার্তা দেন, এই আন্দোলন কিন্তু আর তোমাদের একার আন্দোলন নয়। আমরাও কিন্তু এই আন্দোলনে সামিল হয়েছি। তাই একা ভেবে,  পূর্ণ কর্মবিরতি না গিয়ে, সেটা নিয়ে অন্যরকম কিছু ভাবনা করা যেতে পারে। কারণ মানুষ ফাঁদে পড়ুক বা কষ্ট পাক এটা আন্দোলনের উদ্দেশ্য তো নয়।'