বিজেন্দ্র সিংহ ও সৌভিক মজুমদার: আগামী সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি মামলার (SSC Scam verdict) ফের শুনানি। হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court on SSC Scam Verdict)) গিয়েছে রাজ্য-এসএসসি-পর্ষদ। আজ শুনানি হয়েছে, এরপর আগামী সোমবারও শুনানি হবে।
২০১৬-এর সব নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। অযোগ্যদের চাকরি যাবে ঠিক আছে কিন্তু যোগ্যদের কেন নিয়োগ বাতিল হবে- এই প্রশ্ন উঠেছিল। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম-কোর্টে (SC on SSC Verdict) গিয়েছিল রাজ্য-এসএসসি-পর্ষদ।
এদিন শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ রেখেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আসল ওএমআর শিট নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তাহলে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করবেন কী ভাবে? সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন- এত সংখ্যক চাকরি বাতিল- এটা বড় সিদ্ধান্ত। যদি আদালতের কাছে অন্য উপায় না থাকে, তাহলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। অর্থাৎ তিনি মনে করছেন, কলকাতা হাইকোর্টের আর হয়তো অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় ছিল না, আর কোনও রাস্তা ছিল না, তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সবার চাকরি বাতিল করেছে। যা পরিস্থিতি ছিল তাতে অন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবকাশ ছিল না।
প্যানেলে না থেকেও চাকরি করছে, এটা বিশাল দুর্নীতি, জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত আরও প্রশ্ন করে, 'টেন্ডার ছাড়াই নাইসাকে বরাত, মিরর ইমেজ ছাড়াই ওএমআর শিট নষ্ট। এটা তো জালিয়াতি, কীভাবে নিয়োগ হয়েছিল?' আরও একটি মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তিনি জানিয়েছেন, দুর্নাীতির সুবিধাভোগী কারা সেটা দেখতে হবে। অর্থাৎ দুর্নীতির মূলচক্রী কারা, কারা আদতে লাভবান হলেন সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এই বিষয়টি বের করার জন্যই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
বলা যায়, এখনও পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি তাঁর মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণে যা জানাচ্ছেন- তাতে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল- যেখানে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছিল অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত যাঁরা নিয়েছেন- যাঁরা মন্ত্রিসভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যুক্ত ছিলেন- তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারবে সুপ্রিম কোর্ট। রায়ের এসেই অংশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই অংশটা সোমবার শুনানি হবে। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বাকি অংশে কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি। এ দিনই সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল-জবাবের সময় বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, 'অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত, ভোটের মধ্যেই কি জেলে মন্ত্রিসভা?'
রাজ্য সরকারের তরফে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়ে যাতে সবার চাকরি থাকে সেই চেষ্টা করা হয়েছিল। এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। যাঁরা অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক একটা জায়গা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ (Calcutta High Court on SSC Scam)। সেই কারণেই যাঁরা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত তাঁদেরও সিবিআই তদন্তের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়েছিল। এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে কাদের হাত রয়েছে সেটা খুঁজে বের করার জন্য সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রায়ের সেই অংশে আপাতত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি অংশ- অর্থাৎ যার মধ্যে চাকরি বাতিলের রায় রয়েছে- সেই অংশে কোনও হাত দেওয়া হয়নি।
এই গোটা বিষয়টি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: সোনা বিক্রি করে বাড়ি কিনছেন ? আয়করে মিলবে বিপুল ছাড়