কলকাতা: রোগী পরিজনদের হাতে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় বউবাজার থানায় (Bowbazar Police Station) লিখিত অভিযোগ দায়ের করল কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত বছরের নভেম্বরে মৃত্য়ু হয় বেহালার সরশুনার বাসিন্দা ক্য়ান্সার আক্রান্ত বছর ২৩-এর দীপঙ্কর পালের। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনেছে মৃতের পরিবার। অভিযোগ, বুধবার হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে গন্ডগোল করেন পরিবারের লোকজন। সুপারের ঘরে অভিযুক্ত চিকিৎসককে পেয়ে শারীরিক নিগ্রহও করা হয়। ঘটনায় তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। গতকাল বৈঠকে থানায় অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই মতো অভিযোগ দায়ের করা হয়। 


ছেলের মৃত্য়ুর অভিযোগ ঘিরে ধুন্ধুমার: গত ১৭ জানুয়ারি চিকিৎসকের গাফিলতিতে ছেলের মৃত্য়ুর অভিযোগ ঘিরে ধুন্ধুমার বাঁধে কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালে। সুপারের ঘরের সামনে অভিযুক্ত চিকিৎসককে পেয়ে মার, হেনস্থা করেন মৃতের পরিবার। পুলিশ এসে দম্পতিকে সরিয়ে নিয়ে যায়। মৃতের পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল, কিন্তু চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা দুর্ভাগ্য়জনক বলেই  প্রতিক্রিয়া দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে চিকিৎসককে মার, নিরাপত্তারক্ষী আটকানোর চেষ্টা করলে, পিছু ধাওয়া করে চিকিৎসককে আঘাত, টানা হেঁচড়া। চিকিৎসকের গাফিলতিতে রোগীমৃত্য়ুর অভিযোগ ঘিরে, বুধবার কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধে। ছেলে হারানোর এই মহিলার নাম, সোমা পাল। বাড়ি বেহালায়। 


সূত্রের খবর, তাঁর ছেলে, বছর ২৩-এর দীপঙ্কর পাল ক্য়ান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।  ১৮ই নভেম্বর তাঁকে মেডিক্য়াল কলেজের অঙ্কোলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তাঁর চিকিৎসা করছিলেন অঙ্কোলজি বিভাগের চিকিৎসক স্বর্ণবিন্দু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ২৩ তারিখ রোগীকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়। বাড়িতে যাওয়ার পরই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ২৯ নভেম্বর বাড়িতেই মৃত্য়ু হয় ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া দীপঙ্করের। 


কী অভিযোগ পরিবারের: পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে কোনও চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি দেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেননি। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকের গাফিলতির কারণেই মৃত্য়ু হয়েছে ক্য়ান্সার আক্রান্ত যুবকের। গত ৬ জানুয়ারি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরসুনা থানায় অভিযোগ জানায় যুবকের পরিবার। অভিযোগ জানানো হয় মুখ্য়মন্ত্রীর দফতরেও। বুধবার যুবকের পরিবার ও চিকিৎসক দুপক্ষকেই ডেকে পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সুপারের ঘরের সামনে চিকিৎসক স্বর্ণবিন্দু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে দেখেই ক্রোধে ফেটে পড়েন মৃত যুবকের মা। নিরাপত্তারক্ষীরা সরিয়ে নিয়ে যান অভিযুক্ত চিকিৎসককে। এদিকে, প্রশাসনিক ভবনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হলে গেট ধরে ঝাঁকাতে শুরু করেন তিনি। ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন মহিলা। ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। মাটিতে পড়ে যান মহিলা। শেষমেষ পুলিশ এসে দম্পতিকে সরিয়ে নিয়ে যায়। 


অভিযুক্ত চিকিৎসকের বক্তব্য়, দীপঙ্কর পাল নামে ওই যুবক হজকিন্স লিমফোমায় আক্রান্ত ছিলেন। এটি এক ধরনের ক্য়ানসার। যুবকের মৃত্য়ু অত্য়ন্ত দুর্ভাগ্য়ের। এ দিকে, হাসপাতালের উপাধ্য়ক্ষ জানিয়েছেন, মুখ্য়মন্ত্রীর দফতর থেকে অভিযোগ প্রসঙ্গে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। তাই মৃতের পরিবার ও অভিযুক্ত চিকিৎসক দুই পক্ষকে ডাকা হয়েছিল। আমরা পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা দুর্ভাগ্য়জনক। যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।