ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, শিবাশিস মৌলিক , কলকাতা : বাংলায় কেরালা স্টোরি নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে ক্রমশ চড়ছে রাজনীতির পারদ। সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখেই কেরালা স্টোরি ( The Kerala Story  )নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে তোপ বিজেপির। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কাজই করেছেন বলে পাল্টা মন্তব্য তৃণমূলের। এরই মাঝে, টিকিট কেটে কেরালা স্টোরি না দেখতে পেয়ে বেলঘরিয়ায় হলের সামনে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়লেন দর্শকরা। 


তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা


মুক্তি পাওয়ার ৪ দিনের মাথায় পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হয়েছে 'দ্য কেরালা স্টোরি'। রাজ্য সরকারের তরফে এই ছবি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অলআউট আক্রমণে নেমেছে বিরোধী শিবির।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ISIS-এর প্রতি সহানুভূতিশীল : শুভেন্দু


টুইটে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ' কেরলে কীভাবে মৌলবাদী ধর্মগুরুরা মহিলাদের মগজধোলাই করেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। এখানে দেখানো হয়েছে, কীভাবে কেরলে মহিলাদের ধর্মান্তরিত করে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়ায় জঙ্গি সংগঠন ISIS-এর হয়ে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। এই ছবিটি ISIS এবং তার জঙ্গি কার্যকলাপের বিপক্ষে। তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ISIS-এর প্রতি সহানুভূতিশীল? ' 

BJP সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, 'ওনার রাজ্যে অনুপ্রবেশের সমস্যা, রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ছে উনি কিছুই করছেন না। সত্যিকে চাপা দিতে এসব করছেন। খালি সংখ্যালঘু ভোটের চিন্তা।' 

CPM রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, 'মুখ্যমন্ত্রীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন কে ব্যান করতে চেয়েছে? পশ্চিমবঙ্গে কে বলেছিল ব্যান করতে? তথ্য সংস্কৃতি দফতর বলেছিল, ওনার সঙ্গে যেসব লেখক ঘোরাঘুরি করে তারা বলেছিল, না কি পিডব্লুডি বলেছিল? পিডব্লুডি দফতর কি সাহিত্য ঠিক করবে?' 

পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূলও।

তৃণমূল কংগ্রেস  সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ' মুখ্যমন্ত্রী কেরালা স্টোরি কে পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ করে ঠিক কাজ করেছেন। এই কেরালা স্টোরি যদি এখানে দেখানো হতো তাহলে সাম্প্রদায়িকতার চিন্তা ছড়িয়ে যেত। আমরা মনে করি মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।' 

এর আগে যখন, বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতে দীপিকা পাড়ুকোণের অভিনীত পদ্মাবত ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সেই সময় টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ' পদ্মাবতী নিয়ে বিতর্ক শুধুমাত্র দুর্ভাগ্যজনকই নয়, আমাদের নিজেদেরকে ব্যক্ত করার স্বাধীনতা নষ্ট করার জন্য এটা একটা রাজনৈতিক দলের ছক। এই সুপার ইমার্জেন্সির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। চলচ্চিত্র জগতের সকলের একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানানো উচিত।'

এই প্রসঙ্গ টেনেই মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে দ্য কেরালা স্টোরির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন পরিচালক সুদীপ্ত সেন। তিনি বলেন , ' যখন পদ্মাবত রিলিজের আগে আটকে দেওয়া হচ্ছিল, তখন বিরলের মধ্যে বিরলতম রাজনীতিবিদ হিসাবে মমতা দিদি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পদ্মাবতের সমর্থনে। সম্প্রতি বিবিসির একটি ডক্যুমেন্টারি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, মহুয়া মৈত্র সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন। আমি ওঁকে হাতজোড় করে অনুরোধ করেছি যে, দিদি একবার সিনেমাটা দেখে নিন। লোকের কথা না শুনে...আপনার ভাল লাগবে যে একজন বাঙালি পরিচালক এত দায়িত্ববোধের সঙ্গে একটা সিনেমা বানিয়েছেন।'

হলে বিক্ষোভ


এদিকে টিকিট কাটার পরও কেরালা স্টোরি না দেখতে পেয়ে বেলঘরিয়ার একটি হলে বিক্ষোভ দেখান দর্শকরা। পুলিশ বাধা দিলে রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি হয়। সোমবার সন্ধে অবধি বসুশ্রী সিনেমা হলে দেখানো হয়েছে দ্য কেরালা স্টোরি। নবান্নের তরফে হল কর্তৃপক্ষের কাছে বিজ্ঞপ্তি পৌঁছনোর পর মঙ্গলবার থেকে বন্ধ যায় ছবির প্রদর্শন।