ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে এবার জড়াল বীরভূমের মুরারইয়ের প্রয়াত প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রহমানের নাম! তাঁর প্রাক্তন সচিবের বিস্ফোরক দাবি, বিধায়কের হয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন তিনি। লেনদেনের তথ্য বিধায়ক ও তাঁর স্ত্রী-র ২টি ডায়েরিতে নথিবদ্ধ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন গোলাম। অভিযোগ খারিজ করেছেন প্রয়াত বিধায়কের স্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে বেধেছে রাজনৈতিক তরজা।


পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, জীবনকৃষ্ণ সাহা নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তৃণমূলের এই ৩ বিধায়ককে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। আরও অনেকের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত চলছে।  ঠিক এই সময়, নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার নাম জড়াল বীরভূমের মুরারইয়ের প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রহমানের। আর তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, অভিযোগকারী আর কেউ নন, প্রয়াত বিধায়কেরই সচিব!


প্রাথমিক শিক্ষক ও প্রয়াত তৃণমূল বিধায়কের সচিব মহম্মদ গোলাম রসুল বলছেন, অফিসে থাকতাম। এমএলএ দেখা করতে বলতেন। বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা আমার হাতে দিতে বলতেন এবং সে ক্ষেত্রে ডায়েরি মেনটেন করতে বলতেন। ২টো ডায়েরি ছিল। একটা ওঁর স্ত্রী-র। আরেকটা ওঁর। আলাদাভাবে ওটা মেনটেন করা হত। আমার হাতেই লেখা করাত এবং টাকাগুলো ওঁকে বা ওঁর স্ত্রী-র হাতে আমি পৌঁছে দিতাম। উনি মারা যাওয়ার পরে সেই ডায়েরি দুটো, ওঁর ছেলে এবং স্ত্রী, মুরারইয়ের বাড়ি থেকে অরিজিনাল কপিদুটো নিয়ে যায়।


২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত মুরারইয়ের তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন আব্দুর রহমান। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হলেও, করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। সরে দাঁড়ান ভোটের ময়দান থেকে। এই সময়ে তাঁর সেক্রেটারি পদে কর্মরত, পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক মহম্মদ গোলাম রসুলের বিস্ফোরক দাবি, বিভিন্ন চাকরির জন্য রেট বেধে দিয়েছিলেন বিধায়ক নিজেই! জোড়া ডায়েরির পাতায় পাতায় চাকরিপ্রার্থীদের নাম এবং আর্থিক লেনদেনের সমস্ত হিসাব রয়েছে!


আর কত নিয়েছেন বলতে পারব না। আমার হাত দিয়ে, আমি যেটা বলছি, সেটা ২৫-৩০। আরও বেশি হবে। তদন্ত করলে আরও বেশি হবে। ওঁর স্ত্রী...উনি পার্সোনালি আলাদা করে নিয়েছেন আরও। 


তৃণমূলের প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়কের স্ত্রী শেহনাজ বেগম বর্তমানে মুরারই ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী। প্রয়াত স্বামীর প্রাক্তন সেক্রেটারির অভিযোগকে তিনি নস্যাৎ করেছেন।


বীরভূমের মুরারই ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী  শেহনাজ বেগমের আবার দাবি, মিথ্যা কথা। মিথ্যা অভিযোগ। মিথ্যা ব্লেম লাগাচ্ছে। এটা কোনওদিনই নয়। আমাদের বিধায়ক ছিলেন খুব মানবিক, খুব ভাল মানুষ ছিলেন। কোনওদিন কারও কাছে চাকরি দেব বলে, কোনও টাকা উনি নেননি। এই যে গোলাম রসুল কথাগুলো বলছে, সে কাছের লোক ছিল। ছেলের মতো ছিল। আমাদের বিধায়ক খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। সেই ভাল মানুষের সুযোগ নিয়ে, তাঁর পিঠ পিছে, অনেক লোককে চাকরি দেব বলে টাকা নিয়েছে। সেটা এখন বিধায়ক চলে যাওয়ার পরে, ও মিথ্যা অভিযোগ একটা, যিনি মারা গেছেন, তাঁর ওপরে চাপাতে চাইছেন!


নিয়োগ দুর্নীতির চক্রে তৃণমূলের প্রয়াত বিধায়ক? প্রাক্তন সচিবের বিস্ফোরক অভিযোগে শোরগোল! মহম্মদ গোলাম রসুল আরও বলছেন, সমস্ত কিছুর তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে আছে। টাকা-পয়সা ওঁদেরকে দেওয়া হয়েছে এবং রিসিভ করেছেন। এবং কোথায় কোথায় লাগিয়েছেন, তাও আমি মোটামুটি জানি। উনি তৎকালীন অবস্থায় স্কুলের পিছনে টাকা খরচ করেছেন। কোথায় পাঠিয়েছেন, সেগুলোও আমার কাছে তথ্য-প্রমাণ, আমি সময়ে প্রকাশ করব


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ড নিয়ে চাপানউতোরের আবহে এই ইস্যুটি সামনে আসতেই বেধেছে বাগযুদ্ধ। জেলায় জেলায় নিয়োগ দুর্নীতির চক্রের মাথাদের খোঁজ চালাচ্ছে সিবিআই। গ্রেফতার হয়েছেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। এবার পাশের জেলা বীরভূমে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তৃণমূলেরই প্রয়াত বিধায়কের নামে অভিযোগ উঠল।