কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে পোস্ট কুণালের। দোষীদের ফাঁসির দাবি জানানোর পাশাপাশি, বিরোধীদের চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন। এসব রুখতে লড়াইতে 'সেনাপতি' অভিষেককেও সক্রিয়ভাবে সামনে চাইলেন কুণাল। তাঁর এই পোস্ট ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। (Kunal Ghosh)


আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে পথে নেমেছেন তৃণমূল নেতৃত্বও। মমতার নেতৃত্বে দলের নেতা-নেত্রীরা পথে নামলেও, সেখানে অভিষেককে দেখা যায়নি। সেই নিয়ে কানাঘুষোর মধ্যেই মাইক্রোব্লগিং সাইট X-এ ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করলেন কুণাল। তিনি লেখেন, 'RG কর, আমরাও প্রতিবাদী। দোষী/দের ফাঁসি চাই। কিন্তু তৃণমূল এবং বাংলার বিরুদ্ধে শকুনের রাজনীতি বামরামের। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব রুখতে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সক্রিয় ভাবে সামনে চাই। আমাদেরও কিছু ভুল শুধরে সঠিক পদক্ষেপ করে সব চক্রান্ত ভাবতে হবে'। (Abhishek Banerjee)


হঠাৎ করে কেন এমন পোস্ট কুণালের? এবিপি আনন্দে কুণাল বলেন, "RG করে ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদ, নিন্দা আমাদেরও। বাম এবং রাম, যাদের হাত এসব ঘটনায় রাঙা, তাদের নাটক, চক্রান্ত করতে দেব না। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমাদের আন্দোলন চলছে। আমরা মানুষকে বাস্তব বোঝাচ্ছি। আমরা কী করেছি, সিপিএম কী করেছিল, আর অন্য রাজ্যে কী ঘটছে, বোঝাচ্ছি আমরা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মমতাদি যেমন আমাদের নেত্রী, তেমনই অভিষেক আমাদের সেনাপতি। আমার মতো সাধারণ কর্মী, সৈনিকরা মমতাদির নেতৃত্বে লড়ছি।"

 

কুণাল আরও বলেন, 'একটা অনভিপ্রেত, কুৎসিত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শকুনের রাজনীতি করা হচ্ছে। ন্যায় বিচার আমরা সবাই চাইছি, কিন্তু ওরা শকুনের রাজনীতি করছে। মমতাদি এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা সেখানে সেনাপতি অভিষেককেও সক্রিয় ভাবে এই লড়াইয়ে সামনে চাই। অভিষেক যথেষ্ট ট্যুইট করেছেন। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মসূচিগুলি নিয়ে মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছনো, এতে অভিষেককে আরও বেশি করে চাইছেন কর্মীরা'।





 

আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় রাজ্য যেখানে উত্তাল হয়ে উঠেছে, পাশাপাশি হাসপাতালে সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর জি কর থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর পরই কোন যুক্তিতে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের মাথায় বসানো হল, সেই প্রশ্নও তোলেন অনেকে। এমনকি দলের প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেনও বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। আর জি করে কী ঘটছে, সেই খবর হয় মমতার কাছে পৌঁছচ্ছে না বা তাঁকে জানতে দেওয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।  সন্দীপের প্রভাবশালী হওয়া নিয়েও নানা কথা শোনা গিয়েছে।

 

সন্দীপকে নিয়েও এদিন মুখ খোলেন কুণাল। তাঁর কথায়, "সন্দীপ ঘোষ দোষী না নির্দোষ, আমরা জানি না। তাই এখনই দোষী বলার জায়গায় আমরা নেই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কিছু ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে, যার সঙ্গে হয়ত খুনের সংযোগও নেই। এই জায়গায় রাজ্য সরকার, স্বাস্থ্য দফতর সন্দীপবাবুকে যদি আর জি কর থেকে অব্যাহতি দিয়ে, কিছুদিন যদি তদন্ত হতো, শেষ হতো...তার আগে ন্যাশনালে পোস্টিং করে দেওয়া...এই ধরনের কিছু সিদ্ধান্তে মানুষের আবেগ, ভুল বোঝাবুঝি বেড়ে গিয়েছে। ফলে এখানে আমাদের আবেদন, সাধারণ বাগরিক, প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে আবেদন, সন্দীপবাবুকে দোষী বলছি না, কিন্তু যেহেতু কিছু বিতর্কের জায়গায় রয়েছে। ফলে অত তাড়াতাড়ি ওঁকে ন্যাশনালে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া না হতো, তাহলে সন্দেহের বাতাবরণটা এড়ানো সম্ভব হতো। মমতাদি ফাস্টট্র্যাক কোর্ট, ফাঁসির দাবি, সবই প্রথম থেকে বলছেন। কিন্তু এই ধরনের কিছু সিদ্ধান্তে মানুষ ভুল বুঝেছেন। সেই সুযোগটাই পেয়েছে বাম ও রাম। তাই অভিষেককে সক্রিয় ভাবে সামনে চাই।"

 

আর জি করের ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিলেও, দলের হয়ে সম্মুখভাগে দেখা যায়নি অভিষেককে। সেই নিয়ে গুঞ্জনের মধ্যেই কুণাল মুখ খুললেন। এ প্রসঙ্গে বিজেপি-র রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "তৃণমূল গৃহীত, পরীক্ষীত এবং পরিত্যক্ত। এই মুহূর্তে তৃণমূলের কোনও নেতার কোনও পোস্ট, দলের সিদ্ধান্ত, অভ্যন্তরীণ রসায়ন, নেতৃত্ব পরিবর্তন, ভবিষ্যতের কর্মসূচি, হাসাপাতালের আধিকারিক বদল, সমাজ সংস্কার মানুষ আর ভাবছেন না। গোটা তৃণমূলকে এক দেখছেন মানুষ। তৃণমূল একটা ব্যবস্থা, যারা দখলদারিতে বিশ্বাসী। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও পরিবর্তন করতে পারবেন না। একটাই রাস্তা এখন, তৃণমূলের বিসর্জন।"

 

সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রসায়নে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা সামনে থাকবেন, না কি অভিষেক এগিয়ে যাবেন, এসবে মানুষের কিছু এসে যায় না। কুণালের যোগ্যতা আছে যে উনি মমতাকে চিটফান্ডের বেনিফিশিয়ারি বলতে পারেন, আবার, মমতার চেয়ে ভাল কেউ করতে পারেন নাও বলতে পারেন। ১৮০ ডিগ্রি ঘুরতে পারেন উনি। উনি শকুনের কথা বলে মানুষকে অসম্মান করলেন। রাতভর যাঁরা রাস্তায় ছিলেন, তাঁদের অসম্মান করলেন, যা প্রত্যাহার করা উচিত।"

 

কুণালের দাবি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও দ্বিমত দেখা দিয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "অভিষেক সবসময় সক্রিয় আছে। এই নয় যে, মুখ দেখিয়ে সক্রিয় থাকতে হবে। আমাদের সঙ্গে আছে ও। আমি বিশেষ করে বলছি, আমরা আর ক'টা দিন আছে? ৬৫ হয়ে গিয়েছে। অভিষেকরাই তো নেতৃত্ব দেবে! কোনও মতভেদ নেই। তৃণমূল একসঙ্গেই রয়েছে। ওকে বোধহয় চোখের ব্যাপারে ডাক্তার একটি সাবধানী থাকতে বলেছেন। আমি যতদূর জানি। ২১ জুলাই কথাও বলি আমি। ডাক্তার ওকে বলেছিলেন, 'চোখটা নষ্ট করে দিচ্ছো তুমি'।"