নয়াদিল্লি: তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হার আমিষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সওয়াল ঘিরে বিতর্কের রেশ কাটেনি। তার মধ্যেই এবার আরও মাছের যোগানের পক্ষে সওয়াল করলেন তৃণমূলেরই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভায় দাঁড়িয়ে 'প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্প্রদায় যোজনা' প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন তিনি। 


মাছ-ভাত ছাড়া বাংলা ও বাঙালিকে কল্পনা করা কঠিনই নয়, একপ্রকার অসম্ভব। সেই বাংলা থেকেই নির্বাচিত তৃণমূল সাংসদ, শত্রুঘ্ন সিন্হার আমিষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সওয়াল ঘিরে সম্প্রতি বিতর্কের ঝড় ওঠে। এরই মধ্যে এবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে বাঙালির প্রিয় মাছের পক্ষে সওয়াল করে, 'প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্প্রদায় যোজনা' প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ তুললেন তৃণমূলেরই আরেক সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, " বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। আমরা এত মাছ খাই যে, যা উৎপাদন হয় তাতে আমাদের চলে না। কেরল পেয়েছে ৬১ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা । আমাদের তাতে কোনও অসুবিধা নেই। আমাদের বাংলাতেও একাধিক উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে। কেন একটাই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে? আমার প্রশ্ন, আমাদের জন্য কী করলেন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য? এ তো আপনি 'কোস্টাল ভিলেজ' দিয়েছেন, ঠিক আছে। আরও, 'কোস্টাল ভিলেজ' বানান। গঙ্গার পাশে। বানান কিছু। আপনার (বিহার) উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে আমার কোনও দুঃখ নেই। কিন্তু আমাদের জন্য রাজীবজি কিছু তো করুন।''





তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য়ের পাল্টা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় মৎস্য ও প্রাণী পালন মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিংহ। তিনি জানিয়েছেন, "আমি ওঁকে বলব, আপনার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখ দেখতে ভাল নাই লাগতে পারে, কিন্তু ওঁর (প্রধানমন্ত্রী) যে প্রকল্প রয়েছে তা যে দেশের উন্নয়নের জন্য, তা স্বীকার করা উচিত।  প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্প্রদায় যোজনা যখন শুরু হয়েছিল ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২-এ পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনও প্রস্তাব পাঠায়নি। এখন প্রস্তাব এসেছে, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।''

সম্প্রতি বাংলা থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের সাংসদ, 'বিহারীবাবু' শত্রুঘ্ন সিন্হা আমিষ নিষিদ্ধ করার পক্ষে সওয়াল করেন। তিনি বলেছিলেন, "কিছু জায়গায় গো মাংস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেটা ঠিক হয়েছে। আমাকে জিজ্ঞেস করো গোমাংস কেন আমিষই নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত। এটা আমার রায়।'' এবার তৃণমূলেরই সাংসদ কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় উল্টো পথে হেঁটে আরও মাছের যোগানের পক্ষে সওয়াল করলেন। 

মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্যজীবীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ৫ জুলাই কেন্দ্রীয় বাজেটে 'প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্প্রদায় যোজনা'র ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। সেই প্রকল্পে বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ ঘিরে ফের উস্কে উঠল আমিষ-নিরামিষ বিতর্ক। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "আমরা কল্যাণ ব্যানার্জির সঙ্গে আছি, শত্রুঘ্ন সিন্হার সঙ্গে নেই। মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালি মাছ খাবে না? ঠিকই তো বলছে। বাঙালি ইলিশ খাবে না? বাঙালি ভেটকির পাতুরি খাবে না? বাঙালি গলদা চিংড়ির মালাইকারি খাবে না? পুঁটি খাবে না, ট্যাংরা খাবে না, তাহলে আর বাঙালি কোথায়? এটাই তো আমি বলেছিলাম সেদিন যে শত্রুঘ্ন সিন্হাকে এধরনের বিবৃতি দেওয়ার আগে একবার দিদির সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত। আমরা এব্যাপারে অন্তত কল্য়াণ ব্যানার্জির সঙ্গে আছি।''


আরও পড়ুন: Madhyamik Exam 2025: বোনের হয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন, অ্যাডমিট কার্ডের ছবি দেখে সন্দেহ, হাতেনাতে ধরা পড়লেন দিদি