সৌমেন চক্রবর্তী, পশ্চিম মেদিনীপুর: জমি সংক্রান্ত বিবাদের ঘটনায় জরিমানা নেওয়া হয়েছিল। ১১ বছর পর সিপিএম কর্মীদের সেই টাকা ফেরানো হল তৃণমূলের তরফে। ডেবরার এই ঘটনায় তুঙ্গে রাজনীতি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ টাকা নিয়েছিলেন। আরও কেউ নিয়ে থাকলেও টাকা ফেরানো হবে। জানালেন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান।


১১ বছর পর ‘জরিমানা’ ফেরত তৃণমূলের


ডেবরার নরহরিপুরের সিপিএম কর্মী মদন জানার কথায়, 'আমরা সিপিএম পার্টি করতাম। এই নিয়ে আমাদের জরিমানা করে, যে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। ১৫ হাজার টাকা সুদে টাকা নিয়ে দিই। টিএমসি আসার পরেই দিয়েছিলাম। সেই টাকা এখন ফেরত দিয়েছে।'


এ যেন উলটপুরান পশ্চিম মেদিনীপুরে। ১১ বছর পর সিপিএম কর্মীদের ‘জরিমানা’র টাকা ফেরানো হল তৃণমূলের তরফে। ডেবরার নরহরিপুরের বাসিন্দা কয়েকজন সিপিএম কর্মীর দাবি, ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর, জমি সংক্রান্ত একটি বিবাদের কারণে তাঁদের থেকে জরিমানা বাবদ হাজার হাজার টাকা নিয়েছিলেন শাসকদলের নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি, তিনজনকে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। 


সিপিএমের দাবি, তাদের কর্মী কিঙ্কর মান্নাকে ৩০ হাজার টাকা, মদন জানাকে ১৫ হাজার ও মাধব সামইকে ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে তৃণমূল। ওই অঞ্চলের তৃণমূল কর্মী অনুপ পাত্রের কথায়, 'সিপিএম আমাদেরের ওপর বহু অত্যাচার করেছে। তখন গ্রামবাসী, সকলের সহযোগিতায় জমি সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে টাকাটা জরিমানা হয়েছিল, সেই হিসেবে আমরা যারা নতুন আসছি, আমরা বুঝতে পারছি এটা ঠিক নয়। সেই হিসাবে আজ থেকে ২০-২৫ দিন আগে টাকাটা আমরা ফেরত দিয়ে দিয়েছি। সকলের সঙ্গে মিশে ভালভাবে চলব।'


এই নরহরিপুর গ্রামে ২০১১ সালে নেওয়া 'জরিমানা' ফেরত দিচ্ছে তৃণমূল। তাঁদের বক্তব্য, এখন ফ্রেশ রাজনীতি করতে চান। ভুল শোধরাতে চান। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।


পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিএম সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের কথায়, 'এটা আজ হোক, কাল হোক, পরশু হোক। এটা বাংলাতে ঘটবে, যে মানুষের কাছ থেকে অন্যায় করে শাসক দল, অন্য রাজনৈতিক দল করার জন্য বা সিপিএম করার জন্য, যাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে জোর করে, সেই টাকা তো মানুষ একদিন ফেরত করবেই। তারই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।'


অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা ও সোনা উদ্ধারের পর গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। হারিয়েছেন মন্ত্রিত্বের পদ থেকে দলের সমস্ত পদও। এই পরিস্থিতিতেই চাপে পড়ে তৃণমূল জরিমানার টাকা ফেরাচ্ছে বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। 


বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি শমিতকুমার দাসের মন্তব্য, 'তৃণমূল যখন শক্তিশালী হয়, তখনই এলাকার সব দুষ্কৃতীরা এক হয়ে, এই ধরনের কাজ করে। যখনই ওরা দুর্বল হয়ে পড়ে, তখনই তারা এইভাবে টাকা ফেরত দেয়। ওরা মনে করছে, কয়েক মাসে অবস্থার পরিবর্তন হবে, তাই আগেভাগে এই উদ্যোগ।'


আরও পড়ুন: North 24 Pargana: খড়দায় শ্যুটআউটের ঘটনা, গুলিবিদ্ধ এক যুবক


পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেস চেয়ারম্যান অজিত মাইতির কথায়, 'কেউ টাকা নিয়ে থাকলে, ব্যক্তিগত পরিসরে নিয়েছে। ২০১১-এর পর কেউ একটু নিত, তারপর আর কোনও অভিযোগ নেই। সিপিএম যে সব সত্যি কথা বলে, তার কোনও মানে নেই। আমার কানে এলে আমি নিজে গিয়ে ফেরত দেব।'


বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে ভাবমূর্তি ফেরাতেই কি টাকা ফেরানোর কৌশল নিয়েছে তৃণমূল? তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে।