উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায় ও দীপক ঘোষ কলকাতা : তৃণমূলের সঙ্গে হাতের হাত মেলানোর সম্ভাবনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন নেপাল মাহাতো। এই জোট হলে কংগ্রেস দলটাই শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন কংগ্রেসের (Congress) এই বর্ষীয়ান নেতা। নেপাল মাহাতোর (Nepal Mahato) বক্তব্যকে সমর্থন করেছে সিপিএম। কংগ্রেস তৃণমূলকে ভয় পায় বলে বক্তব্য বিজেপি নেতৃত্বের।


পাখির চোখ ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। জাতীয় রাজনীতি তো বটেই, বঙ্গ রাজনীতির অনেক সমীকরণও বদলে যেতে পারে এই ভোটকে কেন্দ্র করেই। দিল্লিতে মোদি বিরোধী 'INDIA' জোটের মঞ্চে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে ! কিন্তু, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একটা বড় অংশ তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পরিপন্থী। তাদের সুর ক্রমেই চড়া হচ্ছে। এবার, তৃণমূলের সঙ্গে হাতের হাত মেলানোর সম্ভাবনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সুর শোনা গেল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা নেপাল মাহাতোর গলায়। তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের যে পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে সাধারণ কংগ্রেস কর্মীদের বা নেতাদের যা মনোভাব সেটা যদি পরীক্ষা করি তাহলে দেখতে পাব যে, দুইয়ে দুইয়ে চার হওয়ার সম্ভাবনা কম। তৃণমূলের সঙ্গে I.N.D.I.A জোটের যে গল্প উঠছে, এটা হয়ে গেলে কংগ্রেসের সংগঠন নিশ্চয়ই খারাপ হবে।"

নেপাল মাহাতো প্রদেশ কংগ্রেস বর্ষীয়ান নেতা। ৫ বার বিধানসভা ভোটে লড়ে ৪ বার জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের প্রতীকে।প্রদেশ কংগ্রেসের যে গুটি কয়েক নেতার এখনও কিছুটা হলেও জনভিত্তি আছে, তার মধ্য়ে অন্য়তম নেপাল মাহাতো।তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে ঝালদা পুরসভা ছিনিয়ে এনেছিলেন এই নেপাল মাহাতো ! কিন্তু, তৃণমূল অনেক চেষ্টার পর, কংগ্রেস ভাঙিয়ে ঝালদা পুরসভা দখল করেছে ! আর তাই ঝালদা হারানোর ক্ষত বুকে নিয়ে, নেপাল মাহাতোর মতো হেভিওয়েট নেতার তৃণমূলের সঙ্গে হাত না মেলানোর পক্ষে সওয়াল করাটা, কার্যত কংগ্রেস হাইকমান্ডকেই বার্তা।


এ প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "নেপাল মাহাতো বলেছেন, যে কেন্দ্রীয় নেতারা যদি বলেওবা, তাঁরা তো বাস্তবটা বুঝতে পারছেন না। তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে কংগ্রেস দলটা উঠে যাবে। নেপাল মাহাতো পুরনো লোক। তাঁর তো অভিজ্ঞতা আছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেস জোট করার পর ২০১১ সালে তৃণমূলে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেসের সাহায্যে এবং এসেই কংগ্রেসকে ভাঙতে শুরু করেছে।" 


এই ইস্যুতে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের মন্তব্য, "সত্যি কথাটাই বলে দিয়েছেন। এখন দেখুন, ওঁর কাছে কী স্যাংশন আসে সুপ্রিমোর কাছ থেকে।"

এরইমধ্য়ে শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস কমিটি নিজাম প্য়ালেস অভিযানে নামে। প্রতীকী ঢাক বাজিয়ে সেখান থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ঘুম ভাঙানোর দাবি জানানো হয়। কিন্তু, এই কংগ্রেসের অন্য়তম শীর্ষ নেতা কে সি বেণুগোপাল আবার অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে ইডির তলবকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আখ্য়া দিয়েছিলেন !


যদিও কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, "ইডি-সিবিআই যে বাস্তবে ঘুমাচ্ছে তা আপনারাও জানেন। বিজেপি এখানে পাঠিয়েছে সরষের তেল, তার সঙ্গে মশারি বালিশ। বিজেপি মার্কা মশার ধূপ। আনন্দে ঘুমাচ্ছে ইডি-সিবিআই। তদন্তের নামে ঢপবাজি করছে। বিচারপতিদের কাছে যেভাবে তারা থাপ্পড় খাচ্ছে তাতে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে।"


রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, "এই প্রশ্নটা দিল্লিতে গিয়ে করতে হবে। এখানকার কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীকে করতে হবে। দেখলেন না, অধীর চৌধুরী বিরোধিতা করেছিলেন বলে, সনিয়া-রাহুল গাঁধী সরাসরি না বলে শরদ পাওয়ারকে কাজে লাগিয়ে ওঁকে বার্তা দিয়ে দিয়েছেন, ধমকে দিয়েছেন। এঁদেরও দেবে।"

সামনেই উৎসবের মরশুম। উৎসবের মরশুম শেষ হলেই বেজে যাবে লোকসভা ভোটের দামামা। তার মধ্যে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারবে কংগ্রেস?