আশাবুল হোসেন, সুমন ঘরাই ও বিজেন্দ্র সিংহ: রামনবমীর (Ram Navami) মিছিল ঘিরে অশান্তির পর, বিজেপি-র (BJP) বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর পাশাপাশি, হনুমান জয়ন্তী (Hanuman Jayanti) নিয়েও সতর্কবার্তা দিলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamata Bnaerjee)। ওই দিনের জন্য়, নবান্নর তরফে পুলিশ সুপারদেরও সতর্ক করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। অন্য় দিকে, রামনবমীর শোভাযাত্রা ঘিরে অশান্তি নিয়ে পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি।


হাওড়ার শিবপুর থেকে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা, কিংবা হুগলির রিষড়া। গত তিনদিনে রামনবমীর মিছিল ঘিরে অশান্তি ছড়িয়েছে একাধিক জায়গায়। যা নিয়ে রাজ্য় রাজনীতি এখনও উত্তপ্ত। সোমবার এ নিয়ে ফের বিজেপি-র বিরুদ্ধে সরব হলেন মমতা। সেই সঙ্গে আগামী ৬ এপ্রিল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হনুমান জয়ন্তী নিয়েও সতর্কবার্তা দিলেন তিনি।


সোমবার মমতাকে বলতে শোনা যায়, "আরেকটা দিন আমি অ্য়াডমিনিস্ট্রেশনকে সতর্ক করব। ৬ তারিখটাও মনে রাখবেন আমাদের ছেলেমেয়েরাও। ৬ তারিখটা... আমরা বজরংবলীকে সবাই সম্মান করি। কিন্তু, ওরা যেন দাঙ্গার নামে আবার কোনও প্ল্য়ান করতে না পারে, এটা মাথায় রেখে দেবেন। সারা ভারতবর্ষে করছে। ওরা পাপিষ্ঠ, চোরডাকাত। সব নাটের গুরুকে ধরা হবে। এরা ঘর পোড়াচ্ছে! বুলডোজ়ার নিয়ে মিছিল করছে! বুলডোজ়ার নিয়ে কেউ মিছিল করে? বুলডোজ়ার নিয়ে রাস্তা বানাতে যায়। আর এরা মিছিল করছে! পঞ্চায়েত নির্বাচনে আর ২০২৪ সালে এ সব মনে রাখবেন। এদের আপনারা ভোট দেবেন না।"


যদিও নিয়ে মমতাকে একহাত নেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, "উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাতে রামনবমীতে অশান্তি হয়নি। মমতার ধাপ্পাবাজি সংখ্য়ালঘুরা ধরে ফেলেছে।" রামনবমীকে ঘিরে দফায় দফায় অশান্তির আবহে তৃণমূল-বিজেপি গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, "ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে পরিকল্পিত অশান্তি। তৃণমূল এবং বিজেপি-র মিলিত খেলা। রাজনৈতিক স্বার্থে পরিকল্পিত অশান্তি। বিজেপি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে। বিজেপি-কে সাহায্য করছে তৃণমূল।"


রামনবমীকে ঘিরে দফায় দফায় হিংসা, অশান্তির সাক্ষী হয়েছে বাংলা। হাওড়ার পর এই মুহূর্তে তপ্ত হুগলির রিষড়া। রাতে নতুন করে অশান্ত রিষড়া। ট্রেন লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি, ব্যাপক বোমাবাজি। পুলিশকে লক্ষ্য করেও একের পর এক ইট, পাথরের টুকরো ছোড়া হয়। গতকাল রাত সাড়ে ৮টা থেকে রিষড়ার চার নম্বর রেলগেট এলাকায় দফায় দফায় গন্ডগোল হয়। রেললাইনে নেমে কার্যত তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।  


শেষ পর্যন্ত র‍্যাফ নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। অশান্তির জেরে রাত ১০টা থেকে হাওড়া-ব্যান্ডেল মেইন লাইনে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় রেল পরিষেবা। একের পর এক স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে লোকাল এবং দূরপাল্লার ট্রেন। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ আটকে পড়েন। হাওড়া স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন যাত্রীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা পর, রাত সওয়া ১টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। গতকালের তাণ্ডবের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত  ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ। 


সেই আবহেই বৃহস্পতিবার হনুমান জয়ন্তীর দিন যাতে কোথাও কোনও অশান্তি না হয়, তা নিয়ে নবান্নর তরফে সমস্ত জেলার পুলিশ সুপারদেরও সতর্ক করা হয়েছে।