কলকাতা: টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ কম টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে হয়নি তাঁকে। লোকসভা থেকে তাঁকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে সংসদের সুুপারিশ কমিটি। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তেরও সুপারিশ করা হয়েছে। সেই আবহে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পেলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। 


বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন মমতা। সেখানেই মহুয়ার সমর্থনে মুখ খোলেন তিনি। বিজেপি মহুয়াকে সংসদ থেকে তাড়াতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন। বলেন, "এরা এখন মহুয়াকেও তাড়িয়ে দেওয়া। তাতে ও আরও জনপ্রিয় হয়ে যাবে। যেটা এতদিন ভিতরে বলত, আগামী তিন মাস না হয় বাইরে বলবে। রোজ সাংবাদিক বৈঠক করে বলবে! কী যায় আসে! মূর্খ না হলে নির্বাচনের তিন মাস আগে কেউ এমন করে?"


মহুয়াকে নিয়ে মমতার এই উক্তিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে রাজনৈতিক মহল। কারণ এর আগে, মহুয়াকে নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি মমতা। মহুয়া নিজের লড়াই লড়ে নিতে পারবেন বলেই মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি একে একে ফিরহাদ হাকিম, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়ার সমর্থনে এগিয়ে আসেন। সাংসদপদ নিয়ে টানাটানির মধ্যে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়াকে নদিয়া জেলায় তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয়। তার পর এই প্রথম মহুয়ার সমর্থনে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মমতা। মহুয়া যদিও গোড়া থেকেই বলে আসছিলেন, দলনেত্রী থেকে তৃণমূলের সকলেই তাঁর পাশে রয়েছেন। 


২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি বেছে বেছে বিরোধী শিবিরের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মমতা। বলেন, "কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি বিরোধী শিবিরের নেতাদের নিশানা করছে। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি যখন থাকবে না, এদের কী হবে! ক্ষমতায় বিজেপি-র মেয়াদ তো আর মাত্র তিন মাস!" 


সংসদে জ্বালাময়ী ভাষণের জন্যই পরিচিত মহুয়া। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে আদানিদের হাতে একাধিক বন্দর তুলে দেওয়া থেকে গৌতম আদানির সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সম্পর্ক নিয়ে লাগাতার সুর চড়াতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও এ নিয়ে ফের সরব হবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তার আগেই মহুয়ার বিরুদ্ধে নীতি কমিটিতে অভিযোগ জানান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে টাকা এবং দামি উপহারের বিনিময়ে মহুয়া সংসদে আদানিদের বিরুদ্ধে সরব হন বলে অভিযোগ করেন। টাকা নেওয়ার কথা আগাগোড়া অস্বীকার করে এসেছেন মহুয়া। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় নীতি কমিটির সদস্যরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অশালীন প্রশ্ন করেন বলেও অভিযোগ করেন। তার পরই তাঁর সাংসদপদ খারিজের সুপারিশ করে নীতি কমিটি, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেকও। তদন্তে যখন কিছু প্রমাণই হয়নি, সেখানে মহুয়ার সাংসদপদ বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া হল কোন যুক্তিতে, প্রশ্ন তোলেন তিনি।