সোমনাথ মিত্র, হুগলি: রাজ্য বিজেপি-র (West Bengal BJP) অন্দরে ফের বিদ্রোহের ঢেউ। সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta Majumdar) বিরুদ্ধেই অনাস্থা দলের একাংশের। প্রকাশ্যে তা জানাতে কুণ্ঠাও করছেন না অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে এমন লোকজনকে দায়িত্ব দিচ্ছেন সুকান্ত, তাঁরা সবাই অযোগ্য। অথচ যাঁরা দীর্ঘ দিন দলের হয়ে খেটেছেন, আঁটঘাট সব জানেন, তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাতেই সুকান্তর উপর ভরসা করা যাচ্ছে না বলে জানিয়ে দিলেন হুগলিতে (Hooghly BJP) বিজেপি-র একাংশ। সরাসরি এ নিয়ে সুকান্তকে আক্রমণে না গেলেও, তাঁর যোগ্য লোকজনকে বাদ দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যে বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষও।


বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের উপর ভরসা নেই দলের একাংশের


সম্প্রতি বিজেপি-র অন্দরে যে সাংগঠনিক রদবদল ঘটানো হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা তথা সিঙ্গুর জেডপি ৪-এর প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত বর্মন। এ নিয়ে রাজ্যে বিজেপি-র সদর দফতরে বৈঠকও করতে যাচ্ছেন তিনি। গত কালই সিঙ্গুরে গিয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু তিনি তার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন সুকান্ত বর্মন। তিনি বলেন, "কাল যে সুকান্ত মজুমদার সিঙ্গুরে এসেছিলেন আমি তা জানি ই না। মণ্ডল সভাপতির কেউ-ও জানেন না।"


সুকান্ত মজুমদারের হাতে সংগঠনের কাজকর্ম যে ভাবে চলছে, তা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন সুকান্ত বর্মন। তাঁর কথায়, "ওঁর উপর ভরসা নেই আমাদের। সব অযোগ্য লোকজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ভাল লোকজনকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এ ভাবে চললে দলের শ্রীবৃদ্ধি হবে কী করে! হুগলিতে সংগঠনের যে কাঠামো তৈরি করেছেন, সেখানে সাধারণ সম্পাদকরা কথাই বলতে পারেন না ঠিক করে। পুরনোদের সঙ্গে নতুনদের মেলবন্ধন থাকতে হবে। কাজ হবে তবেই। দল করতে এসে ১৭ দিন জেলও খেটেছি। কিন্তু দলে তার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না।"


আরও পড়ুন: Hanskhali Update: রাজ্যে ৩৫৫ ও ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা, নাড্ডার কাছে রিপোর্ট BJP-র অনুসন্ধান কমিটির।Bangla News


সুকান্ত বর্মনের আগে, হুগলিতে বিজেপি-র সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন সিঙ্গুর (Singur News) গোপালনগর এলাকার বিজেপি সদস্য দীপঙ্কর বেরাও। সরাসরি রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। একই ভাবে মণ্ডল সভাপতির দায়িত্ব না পেয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পাত্রসায়রের তমাল কান্তি গুইও। তাঁর দাবি, দলের বিধায়ক-সাংসদদের মাসোহারা দিতে না পারার জন্যই তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানো হল। 


এমন পরিস্থিতিতে আক্রমণের রাস্তায় না গেলেও, দলে যোগ্যদের জায়গা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন দিলীপও (Dilip Ghosh)। তাঁর কথায়, "সুকান্ত সবে দায়িত্ব পেয়েছেন। ওঁর অভিজ্ঞতা কম। যাঁরা এতদিন আন্দোলন করেছেন, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যাঁদের বিশ্বাস করে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, গুরুত্ব দেওয়া উচিত তাঁদের। যোগ্য লোকদের বাদ দিলে হবে না। তাঁদের অভিজ্ঞতার সুফল কুড়োতে হবে।’ দিলীপের মন্তব্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি সুকান্ত মজুমদার।


আদি-নব্য় দ্বন্দ্ব বিজেপি-র অন্দরে


তবে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। বাইরে থেকে দু'দিন আগে যাঁরা বিজেপি-তে গিয়েছেন, তাঁরা ছড়ি ঘোরাবেন, আর পুরনোরা কোণঠাসা হয়ে থাকবেন, এমনটা চলতে পারে না বলে জানান কুণাল। তাই এমনটা যে হতে চলেছে তা আগে থেকেই জানতেন বলে জানান তিনি। কুণালের কথায়, "তৃণমূলকে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, সুকান্তবাবুর উচিত, দিলীপবাবুর পাঠশালায় গিয়ে রাজনীতির অ,আ,ক,খ শেখা। দল কী ভাবে চালাতে হয়, কী ভাবে জনসংযোগ করতে হয়, দরজায় দরজায় ঘুরে মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়, এ সব শেখা উচিত ওঁর।"


যদিও এই প্রথম নয়, পুরভোটের পর শান্তনু ঠাকুর-সহ মতুয়া নেতৃত্ব যেমন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন, তেমনই সম্প্রতি দুই উপনির্বাচনে দলের হারের পর সুকান্ত এবং বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরারাও। অপরিণত নেতৃত্বের জন্যই সকলকে ভুগতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তৃণমূলের থেকে অনেক শেখার রয়েছে বলেও দাবি করেন। পুরনো কর্মীরা শুধু মার খাওয়া এবং জেলে যাওয়ার জন্য রয়েছেন বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন অনুপমও।  ফলে বিজেপি-তে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।